
মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলপথের ১ হাজার ৪৪০ মিটার লুপলাইনের সংস্কার ও পুনঃ নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা এক বছরে। কাজ শুরু হয় ৩ বছর আগে। কিন্তু ৪ দফা সময় বাড়ানো হলেও এখনো ২০ শতাংশ অবশিষ্ট।
সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আর খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। তিনি গা ঢাকা দেওয়ায় সংস্কার বর্তমান কাজ বন্ধ রয়েছে। সংস্কারকাজ বিলম্বিত হওয়ায় বছরে কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রেলওয়ে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ও ভারতের শিলিগুড়ি থেকে আমদানি করা পাথর ওয়াগন থেকে ভেকুমেশিন দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকে লোড করার কারণে সৈয়দপুর স্টেশনের পূর্বপাশের লুপলাইনগুলোর বেহাল দশা হয়ে যায়। এতে প্রায়ই মালবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হতো। এ কারণে স্থানীয় রেলওয়ে দপ্তর ওই লাইন চলাচলের জন্য অনুপোযোগী ঘোষণা করে।
পরে ভারতের শিলিগুড়ি ও বাংলাদেশের পণ্য আনা নেওয়ার সুবিধা বাড়াতে সংস্কারের জন্য ২০২২ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরে রেলওয়ের সংকেত ঘর ও দক্ষিণে দুই নম্বর রেলক্রসিং পর্যন্ত এক হাজার ৪৪০ মিটার রেলপথ সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের জন্য ৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। দরপত্রের মাধ্যমে সংস্কার কাজটি পায় ঢাকার মেসার্স ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিএল) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ২০২৩ সালে ৩১ জানুয়ারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ৪ দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে গত বছরের নভেম্বরে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বর্তমানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, এখন ২০ শতাংশ কাজ বাকি।
রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ডে সরোজমিন ঘুরে দেখা যায়, লুপলাইনের রেলপথে রেললাইন বিছানো হলেও অনেক স্থানেই লাগানো হয়নি ক্লিপ। দেওয়া হয়নি নির্ধারিত পরিমান পাথরও। আবার কোথাও কোথাও পাথর দেওয়াই হয়নি। বন্ধ রয়েছে সংস্কার কাজ।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে না পারায় তার মন্তব্য জানা যায়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ঠিকাদার কাজী নাবিল আহমেদ যশোর-৩ আসনের সাবেক এমপি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। অর্থ সংকটের কারণে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলস্টেশন মাস্টার ওবাইদুল ইসলাম রতন বলেন, ভৌগোলিক দিক বিবেচনায় এ স্টেশনের লুপলাইনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় ব্যবাসায়ীদের ট্রেনযোগে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে পাথরসহ আমদানিকৃত পণ্য ও দেশের মালামাল লাইনগুলোতে রেখে লোড-আনলোড করা হয়। এছাড়া ট্রেনে করে দেশের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন পণ্য আনা-নেয়ার কাজে এ লুপলাইনগুলো ব্যবহার করা হয়। এ থেকে প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করে রেলওয়ে। সেই হিসাবে বছরে প্রায় কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে রেলওয়ে।
ওই লুপলাইনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন বলেন, এক বছর মেয়াদে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর ৪ দফা বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এই বর্ধিত মেয়াদেও কাজ শেষ করতে পারেনি। এখনো ২০ শতাংশ কাজ বাকি আছে। পরিমানমতো পাথর দেওয়া হয়নি এবং পাথরের (ব্লাস) বক্সিং কাজও বাকি আছে । এরমধ্যেই হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। যোগাযোগের চেষ্টা করেও খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের।