শুক্রবার, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

শতবর্ষের শত সংগ্রাম শেষে

র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা (Founding Father) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী ১৭ মার্চ ২০২০। শত বছর পূর্বে তাঁর যখন জন্ম হয় তখন আমাদের ভূ-খন্ডটিতে চলছিল বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসন। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য মানুষের সাথে মিলে এ ভূ-খণ্ডের মানুষজনও তখন বৃটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন স্বদেশের জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন বড় হয়ে উঠছিলেন তখন ভারতীয় স্বাধীনতার এই সংগ্রাম দ্বি-জাতিতত্ত্বের তথা হিন্দু-মুসলমানের স্বতন্ত্র পরিচয়ের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় শেখ মুজিবুর রহমানের।

গোপালগঞ্জের দুরন্ত তরুণ মুজিব কলকাতায় গিয়ে হয়ে উঠেন একজন তেজী ছাত্রযুব কর্মী এবং পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা কর্মী। তবে সাম্প্রদায়িকতা কখনো তাঁকে স্পর্শ করেনি। আর এ জন্যই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মাতৃভাষা বাংলার প্রশ্নে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা লাভ করেন। এ পথ ধরেই তিনি সামনে এগিয়ে চলেন অবিচল থেকে। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সংগঠন দু’টিকে অসাম্প্রদায়িক রূপ দিয়েছেন। ভাষা আন্দোলনে অকুতোভয়ে কারাবরণ করেছেন; দল ও দেশের স্বার্থে মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করেছেন।

গণতন্ত্রের সংগ্রামকে বেগবান করতে এবং স্বাধীকার আন্দোলনকে স্বাধীনতার পথে পরিচালিত করতে ৬ দফা দাবিনামা পেশ করে বাঙালিকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। মামলার পর মামলা মোকাবেলা করে এবং শেষাবধি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হয়ে দেশনেতা হলেন। এজিটেটর থেকে দেশনায়ক হলেন। শেখ সাহেব আর মুজিব ভাই থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন। এবং একদিন স্বাধীন দেশের স্রষ্টা হয়ে জাতির পিতা হয়ে উঠলেন। একাধিকবার ফাঁসির মঞ্চের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এভারেজ বাঙালি থেকে লম্বায় অধিক শালপ্রাংশু এই মানুষটি বাঙালির স্বার্থের প্রশ্নে এবং নীতির প্রশ্নে কখনও আপোষ করেননি। আর সে কারণেই আপন হাতে গড়া স্বাধীন বাংলাদেশে ঘৃণিত সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টদের হাতে আপোষহীন এই মানুষটিকে জীবন দিতে হয়েছে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এ। তাঁর দলের ভেতরেও ছিল তাঁর মতাদর্শের বিরোধীরা, যারা ছিল সাম্প্রদায়িক আর শাসন-শোষণের পক্ষে। তাঁরা চেয়েছিল ইতিহাসের পাতা থেকে মুজিবকে মুছে ফেলতে। কিন্তু তা পারেনি।

শতবর্ষে মুজিব তাই শতগুণ, হাজার গুণ, লক্ষ গুণ, কোটি গুণ শক্তি নিয়ে বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠেছেন অপরিহার্য। ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শাসন এবং শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দাবি নবজাগরিত মুজিবের। শতবর্ষ বা মুজিববর্ষে পিতা মুজিবকে সশ্রদ্ধ সালাম। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *