মঙ্গলবার, ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শহীদ আলী রায়হানের বাড়িতে চোখ রাখেনি এনসিপি, অজুহাতে সময় সল্পতা

রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীতে এসেও শহীদ আলী রায়হানের বাড়িতে পা রাখেনি এনসিপি,  সময় সল্পতার অজুহাতে সাক্ষাৎ করেননি পরিবারের কোন সদস্যের সাথে।

গত রোববার হয়ে গেলো রাজশাহীতে এনিসিপির পদযাত্রা, পথসভা ও সমাবেশ। কিন্তু সেদিন এনসিপির কোনো নেতাই দেখা করেন নি শহীদ আলী রায়হানের পরিবারের সাথে৷ এ নিয়ে তুমুল  সমালোচনার জন্ম দিয়েছে রাজশাহীর জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের মাঝে।

 গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজশাহীতে এনসিপির ষষ্ঠদিনের পদযাত্র ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে সময় তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শান্তির মোড়, নিমতলা, বড় ইন্দারার মোড় পেরিয়ে কলেজ গেটে এসে পথসভায় যোগদেন এনসিপির নেতারা। সে সময় উত্তরের সমন্বয়ক সারজিস আলম, জুলাই আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, তামনিম যারাসহ কেন্দ্রীও নেতৃবৃন্দরা হাতে হাত রেখে হাটেন৷ সেখান থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এসে পথসভা শেষে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
সন্ধ্যা ৬ টার দিকে  রাজশাহী নগরীর রেলগেট থেকে এই পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি নগরীর রেলগেট থেকে শুরু হয়ে নিউ মার্কেট – রানীবাজার-সাগরপাড়া-আলুপট্টি-সাহেববাজার-রাজশাহী কলেজ-সিটি কলেজ-বাটার মোড়-গণকপাড়া হয়ে রাজশাহী জিরোপয়ন্টে পৌছে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, রাজশাহী মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী, যুগ্ম সমন্বয়কারী আল আশরারুল ইমাম তানিম, নাহিদুল ইসলাম সাজু, শামীমা সুলতানা মায়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
তবে শহীদ আলী রায়হানের বাড়িতে না যাওযার বিষয়ে শহীদ আলী রায়হানের ছোট ভাই তানভির রানার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তারা কেউ আমাদের বাড়িতে আসেনি। শহর থেকে আমাদের বাড়ি দুরে হওয়াই তারা আসেনি৷ ফোনে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ফোন দিয়েছিলো তবে নাহিদ বা সারজিস ভাইয়ারা না, তাদের একজন প্রতিনিধি মোবাইলে কথা বলেছে শুধু৷
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক ও এনসিপির রাজশাহী জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম সাজু জানান, রাজশাহীতে ৩ জন শহীদ হয়েছেন। তিন জন শহীদের বাড়ির লোকজনের সাথেই যোগাযোগ করা হয়েছে। শহীদ আলী রায়হান ভাইয়ের বাসায় যাওয়া হয়নি। কিন্তু  আমাদের নেতৃবৃন্দরা রাত প্রায় গভীর রাতে শহীদ সাকিব আনজুম ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলো। পরের দিন পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী পদযাত্রা করার জন্য চলে যেতে হয়েছে। সময় সল্পতার কারণেই শহীদ আলী রায়হানের ভাইয়ের বাসায় যাওয়া হয়নি। বাসায় কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে আসলে তারা সশরীরে  সেখানে উপস্থিত হবেন৷ কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের একজন ফোন দিয়েছিলো ফোন রিসিভ করেনি৷
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির একজন নেতা জানান,  গভীর রাতে  সাকিব আনজুম ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলো এটা সত্য। সন্ধ্যা থেকে  শহীদের বাসাতে যাওয়ার জন্য আমরা বলছিলাম। কিন্তু শহীদ সাকিব আনজুম ভাইয়ের বাসায় যায়। সেখান থেকে বের হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় রাজশাহীর তত্বাবধায়ক ওমর ফারুক ও কেন্দ্রিয় সংগঠক ফতিন মাহদির নেতৃত্বে আড্ডায় মাতেন। তবু শহীদ আলী রায়হান ভাইয়ের বাসায় কেউ-ই যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেননি।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি শামীম হোসেন বলেন, ৫ আগষ্টে যারা শহীদ হয়েছে তাদের আমরা একই নজরে দেখি। আমরা যখন কোনো অনুদান দিয়েছি শহীদ সাকিব আনজুম ভাইয়ের বাসাতেও দিয়েছি শহীদ আলী রায়হান ভাইয়ের বাসাতেও দিয়েছি। আমরা দুই পরিবারে সমানভাবে খোজ খবর রাখি। এনসিপির বিষয়ে তিনি বলেন, তারা এসেছে দলের গুরুপ্ত দিয়েছে নাকি বুঝতেছিনা৷ যেহেতু জুলাই আন্দোলনের শহীদদের জন্যই প্রোগ্রামটা নিয়েছে অবশ্যই অবশ্যই যাওয়া উচিত ছিলো৷
তিনি বলেন, শহীদ আলী রায়হান ভাই তো ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেনি । সারা দেশে যে হাজার হাজার শহীদ হয়েছে, শহীদ আলী রায়হান ও সাকিব আনজুমও সেজন্যই আন্দোলন করেছে। তারা যদি আলাদা বা বিভেদ সৃষ্টি করে তাহলে তো আর কিছু বলার থাকেনা। আমি বাহিরে থাকায় তাদের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি৷ তবে শহীদ আলী রায়হান ভাইয়ের বাড়িতে না যাওয়াটা আমার কাছে ছোট মোন মানুষিকতার মোনে হয়েছে৷
এনসিপির রাজশাহী মহানগরীর প্রধান সমন্বয়কারী মোঃ মোবাশ্বের আলী জানান, যাওয়ার সিদ্ধান্তই ছিলোনা।  একটু মফস্বলের ভেতরে তাই তারা সময় করে উঠতে পারেনি৷ আমি ছিলাম না উনাদের সাথে। রাজশাহী জেলার যিনি কেন্দ্রিয় প্রতিনিধি ওমর ফারুক ছিলেন উনাদের সাথে।  আমরা অতিথিদের আবাসন নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। ক্যাম্পাসে ছাত্রদের সাথে বসেছিলো।  তারপর সাকিব আনজুম ভাইয়ের বাসায় আসছিলো। হয়তো কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে বসাটাকে গুরুত্ব দিয়েছে কোনো কারনে। একটা মানুষের তো বিশ্রাম  লাগে৷ আসলে উপায় হয়ে ওঠেনি হয়তো মোনে হয়েছে আমার কাছে৷   তবে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি হয়নি। যেতে পারেনি যৌক্তিক ব্যাস্ততা ছিলো। তারা ইগনোর করে যায়নি এমনটা না। আমাদেরও আসা ছিলো আকাঙ্খা ছিলো তারা গেলে ভালো হতো।
রাজশাহীর তত্বাবধায়ক ওমর ফারুকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের যে পদযাত্রা ছিলো এটা যে শুধু শহীদ বা আহতদের উদ্দেশ্য করে তা না, যেহেতু আমরা একটা রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছি, সে যায়গা থেকে আমরা প্রোগ্রামটা করেছি রাজনৈতিক ব্যানারে৷ আমরা আহতদের কথা শুনেছি। রাবিতে গিয়েছি আমাদের সহযোদ্ধাদের সাথে বসে কথা শুনেছি৷ আমরা সাকিব আনজুম ভাইয়ের বাসায় ২০-২৫ মিনিট সময় দিয়েছি। ক্যাম্পাসে ২ ঘন্টা ছিলাম। আলী রায়হানের বাসার দূরত্ব অনেক। প্রায় নাটোরের কাছাকাছি৷ তাই সময় সল্পতার কারণে যেতে পারিনি৷  তবে পরবর্তীতে রাজশাহীতে আসলে শহীদ আলী রায়হানের বাসায় যাবেন বলেও জনান এই তত্বাবধায়ক৷
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *