মো.রাসেল মিয়া, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : বাংলাদেশে আইনের শাসন চলবে এবং সেই জন্যই আইনের পথ ধরে সব সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আন্দোলনের কিন্তু কোনো ইস্যু নাই। আপনারা শুধু শুধু রাস্তায় থাইকেন না। আপনাদের যে কাজ সেটা হচ্ছে লেখাপড়া করা। আপনাদের যে কাজ সেটা হচ্ছে আপনাদের কোনো বক্তব্য থাকলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ ৭ আগস্ট সময় দিয়েছেন সেখানে আপনারা বক্তব্য রাখেন। আমি আশা করি আপনারা স্ব স্ব বুদ্ধিতে ক্লাসে ফিরে যাবেন।
শুক্রবার দুপুরে কসবা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষন কর্মসূচী-৩ প্রকল্পের আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত রক্ষণাবেক্ষন কর্মীদের মাঝে সঞ্চয়ের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন দেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন ছাত্ররা করছে। ২০১৮ সালে এই আন্দোলন একবার হয়েছিল। তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা এই কোটা বাতিল করে দিয়েছিলেন। সেই কোটা বাতিল করার পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোট বিভাগে একটা মামলা করেন। এই মামলায় যারা আজকে আন্দোলন করছে তারা কিন্তু পক্ষভুক্ত হন নাই। হাইকোটের সামনে তারা নিজেরা কিংবা তাদের কোনো আইনজীবী বক্তব্য প্রদান করেন নাই। হাইকোর্ট একটা রায় দিল যে কোটা যেটা বাতিল হয়েছে সেটা বেআইনি। তখন সরকার আবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর আপিল বিভাগ যেটা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সেখানে আপিল করল। আপিল করার পর সেখানেও কিন্তু যারা আজকে কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে, রাস্তায় নেমেছে তারা পক্ষভুক্ত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন যে কিছুদিন আগে আমি বক্তব্যে বলেছিলাম যে তারা যদি আদালতে পক্ষভুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন তাহলে আদালত নিশ্চয়ই তাদের বক্তব্য শুনবেন। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই যে তারা আমার বক্তব্যের জন্যেই হউক বা নিজেরা চিন্তা করেই হউক আদালতে পক্ষভুক্ত হয়েছে। মাননীয় প্রধান বিচারপতি তাদের পক্ষভুক্ত হওয়ার দরখাস্ত গ্রহণ করেছেন এবং গ্রহণ করার পর হাইকোর্ট বিভাগের যে রায় সেটা স্থগিত করেছেন এবং তিনি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনা হল ছাত্রদের তিনি অনুরোধ করেছেন লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করার জন্য, শিক্ষকদের তিনি অনুরোধ করেছেন যে ছাত্রদের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
মন্ত্রী বলেন, আখাউড়া এবং কসবায় বহু বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য। তাদেরকে আমাদের সঠিকভাবে শ্রদ্ধা করতে হবে। আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আমাদের জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সঠিকভাবে শ্রদ্ধা করতে না পারি তাহলে আমার মনে হয় আমরা এই বাংলাদেশকে অপমান করব। আজকে আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমাদের যে আইনি কাঠামোই তৈরি করা হউক না কেন তাদেরকে, তাদের ব্যাপারে আমাদেরকে একটা ছাড় দিতে হবে। তাদেরকে আমাদের সঠিকভাবে শ্রদ্ধা করতে হবে। এটা কিন্তু আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। আজকে যে স্বাধীন হাওয়া বাতাস যেটা আমরা নিঃশ্বাস নিচ্ছি এটা তাদের আত্মত্যাগের কারনে। আজকে আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়েছি, আজকে আমরা যে চাকরি পাই সেটাও তাদের আত্মত্যাগের কারনে। পাকিস্তান যদি থাকত তাহলে পরে আপনি যদি মেট্রিকে ফাস্টও হতেন তাহলে কেরানী হওয়ার যোগ্যতা আপনার থাকত না। এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল ১৯৭১ সালে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কারণেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র তুলে নিয়েছিল বলেই আমরা পাক হানাদার বাহিনীকে হারাতে পেরেছি। আমরা বিজয়ী হয়েছি। আমাদের সেইসব কথা সেইসব ইতিহাস মনে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, যৌক্তিক পরিবর্তন আসতেই পারে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫২ বছর হয়েছে। অনেক কিছুর যৌক্তিক সংস্কার হতেই পারে। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। যখন আদালতে মামলা চলে, আদালতের বিবেচ্য বিষয় থাকে তখন আমি সে বিষয়ে কোন কথা বলি না। মনে রাখতে হবে কোন বাঙ্গালীই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা না করলে সেটা মানবে না।
কসবা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শাহারিয়ার মুক্তার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছাইদুর রহমান স্বপন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল মান্নান, কসবা পৌরসভার মেয়র মো. গোলাম হাক্কানী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আবদুল আজিজ, কসবা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদা সুলতানা সুপ্রিয়া। অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষনাবেক্ষন কর্মসূচি-৩ এর আওতায় একশ জন উপকারভোগীর প্রত্যেককে ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০টাকা করে সঞ্চয়ের এক কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক বিতরণ করেন।