মঙ্গলবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

শিক্ষা সমাজের মেরুদণ্ড পচে গেছে

ইকবাল ইবনে মালেক : সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা ঘটছে তা বাহ্যিক দৃষ্টিতে দৃষ্টিকটু এবং অত্যন্ত লজ্জাজনক মনে হলেও অন্তদৃষ্টিতে সেটি ভিন্ন প্রতিফলন।

গত ১৫ বছর ক্ষমতার ছত্রছায়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যা ঘটেছে তা অকল্পনীয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে দলীয় পতাকা তলে ভিড় করার জন্য যে নোংরামি খেলা মেতে উঠেছিল ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

স্কুল ক্যাবিনেট নির্বাচন হাস্যকর পরিগণিত হলেও তা ছিল অসুস্থ রাজনীতির প্রভাব বিস্তারের কেন্দ্রবিন্দু। রাজনীতির মোড়কে মাল-মশলায় এই ক্যাবিনেট গ্রুপভিত্তিক রাজনীতির আধিপত্য বিস্তারে অতুলনীয় ভূমিকা রাখে।

তধাকথিত এই সমস্ত নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব বিস্তারকে হার মানায়। বাহুবলে ছাত্রদের এই ক্যাবিনেট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দখলদারিত্ব, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি, মারামারি, এমন কি বিভিন্ন জায়গায় হত্যার উপক্রম পরিস্থতি সৃষ্টি হয়েছে। একটি স্কুল ক্যাবিনেট নির্বাচন এরকম হতে পারে তা ভাবনার অতীত।

গ্রুপ রাজনীতির প্রতিযোগিতায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে অসুস্থ রাজনীতি চর্চার মধ্যে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে সুযোগ করে দিত যার ফলে রাজনীতির প্রভাশালী ব্যক্তিবর্গরা গ্রুপ ভারি করার নামে অপরাজনীতি নোংরামি খেলায় মেতে থাকতো। ফলশ্রুতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিশোর গ্যাং আদলে গড়ে উঠে অসুস্থ ছাত্রসমাজ।

প্রক্ষান্তরে ঘুণেধরা শিক্ষা সমাজ অটোপাশ সাংসদের দাবার গুটিতে পরিণত হয়। শিক্ষকরা তারা তাদের পেশাগত দায়িত্ব ভুলে গিয়ে বিনাভোটে নির্বাচিত প্রভাবশালীর নেতার তেলমর্ধনে তিনবেলা রুটিন মাফিক নেতার দরবারে হাজিরা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এটি যে স্বাভাবিক ছিল তা নয় রীতিমতো প্রতিযোগিতামূলক হয়ে পড়ে।

প্রক্ষান্তরে নেতার ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় শিক্ষকমন্ডলি শুধু শিক্ষার্থীদেরকে নয় বরং তার সহকর্মী বিদ্যাপাঠর‍ত সাধারণ শিক্ষকদের দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয়। যার ফলে তথাকথিত অটোপাশ নেতার কবলে জিম্মি হয়ে পড়ে মানুষ গড়ার কারিগরসহ আলোকিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো অসুস্থ রাজনীতি প্রভাবে আলোর পথ হারিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। যার কারণে শিক্ষকদের মাঝে প্রভাব বিস্তারে দেখা দেয় অন্ত:দ্বন্দ্ব।

বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেভাবে শিক্ষক মন্ডলি লাঞ্ছিত এবং হেনস্তার শিকার হচ্ছেন তার অন্যতম কারণ একজন শিক্ষক অপরজন শিক্ষকের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বার্থ হাসিলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুটি বানিয়ে আবারো একটা শ্রেণীর অসুস্থ ক্ষমতার লিপ্সায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু এসব হিসাব-নিকাশ একদিনের নয় বরং বিগত বছরের দুঃশাসনের ক্ষমতা কেন্দ্রিক প্রতিফলন। এই কুক্ষিগত ক্ষমতার প্রতিফলনের কারণে শিক্ষা সমাজের মেরুদণ্ড পচে গেছে। যার ফলে সে পচনের দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আজকের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এভাবে শিক্ষক আর ছাত্রসমাজ মুখোমুখি অবস্থানে চলতে পারে না।

শিক্ষকরা যা করুক তারা আমাদের অভিবাবক গুরুজন। পিতৃতুল্য শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হবে এটা কোনোভাবে কাম্য নয় বরং এটি সভ্য সমাজের পরিপন্থি।

তাদের কৃত অপরাধের জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আইন রয়েছে। শিক্ষার্থীরা সে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে এবং কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটি নিয়ম তান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাধান হবে।

ব্যক্তি আক্রোশে শিক্ষা সমাজ বলি হবে সেটি কারো প্রত্যাশা নয়। আসুন সুস্থ ধারায় স্ব স্ব অবস্থানে শিক্ষক, ছাত্র এবং প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলি। ঘুণে ধরা শিক্ষা সমাজকে গুণগত পরিবর্তন মাধ্যমে আলোর ঠিকানায় নির্মাণ করি। অসুস্থ নোংরা রাজনীতি করাল গ্রাস থেকে শিক্ষা সমাজকে মুক্ত করে সভ্য সমাজে নিমজ্জিত করাটা সময়ের দাবি।

লেখক: মানবাধিকারকর্মী

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ