মঙ্গলবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিবগঞ্জের কলেজের সাবেক অধ্যক্ষের ২ বছরে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

মিনহাজ আলী, শিবগঞ্জ (বগুড়া): বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থান মাহীসওয়ার ডিগ্রী কলেজের পদত্যাগকৃত অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের মামলা দায়ের হয়েছে।

এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গত সোমবার ৭ অক্টোবর উক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বাদী হয়ে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, ২০২২ সালের মে মাসের ১৮ তারিখে উক্ত কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন মামুনুর রশিদ। যোগদানের পর থেকেই জয়পুরহাট জেলার আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে শুরু করেন স্বেচ্ছাচারিতা। স্বৈরাচার সরকারের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাউকে তোয়াক্কা না করে একের পর এক দুর্নীতি করে গেছেন তিনি।

৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এই অধ্যক্ষ।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের জানুয়ারীর ১ তারিখ থেকে জুলাইয়ের ৩১ তারিখ পর্যন্ত তিনি প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি একাউন্ট থেকে ১ কোটি ৪৩ লক্ষ ৫ হাজার ৬ শত ৮১ টাকা উত্তোলন করেন। যার মধ্যে বিভিন্ন ভাউচার তৈরি করে ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৪ হাজার ২৭৫ টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন। আর বাকি ২৭ লক্ষ ১ হাজার ৪০৬ টাকা অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেছেন৷


এছাড়াও অত্র কলেজের নিয়মানুযায়ী সকল আয় ব্যাংকের হিসাবে জমা করার বিধান থাকলেও অধ্যক্ষ তার তোয়াক্কা না করে অনার্স ১ম বর্ষের ২৩ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি ফিস ১ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা, ৩য় বর্ষের ৪০ জন শিক্ষার্থীর ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা না করে আত্মসাত করেন। তাছাড়াও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কোর্সের শিক্ষার্থীদের ৪ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬৮০ টাকা, ৬৫৪ জন শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড ও সোল্ডার ব্যাচ বানানোর ১ লক্ষ ১ হাজার ৪০ টাকা, ভর্তি বাতিলকৃত কয়েকজন শিক্ষার্থীর ৮০ হাজার টাকা অধ্যক্ষ অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাংকে জমা না করে আত্মসাত করেন। সবমিলিয়ে অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ ৪০ লক্ষ ৪৯ হাজার ১২৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।


এ বিষয়ে তদন্তের জন্য উক্ত কলেজের গর্ভনিং বডি ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে অডিট উপ-কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি তদন্ত করে অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদের সীমাহিন এ দুর্নীতির সত্যতা পায় এবং এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্হা নেয়ার সুপারিশ করেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, অধ্যক্ষ থাকাকালে স্বৈরাচার সরকারের প্রভাবে মামুনুর রশিদ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করেন। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে চাকরিচ্যুতসহ নানা হুমকি-ধমকি প্রদান করতেন তিনি। বিজ্ঞ আদালতে পদত্যাগকৃত অধ্যক্ষ মামুনের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার চেয়ে মামলা করেছি। সেইসাথে বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যক্ষ মীর শাহে আলমকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তিনিও এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্হা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বর্তমান গর্ভনিং বডির সভাপতি অধ্যক্ষ মীর শাহেআলম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন দুর্নীতি অগ্রহণযোগ্য। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী গভর্ণিং বডির সভায় আলোচনা করে ব্যবস্হা নেয়া হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *