মিনহাজ আলী, শিবগঞ্জ (বগুড়া): বগুড়ার শিবগঞ্জের শরিফ খান ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই।এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।উপজেলার ময়দানহাট্টা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে এই মাদ্রাসাটি।
প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৫৫ বছরেও যাতায়াতের কোনো রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। মাদ্রাসার অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, খেলার মাঠ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও নেই কোনো যাতায়াতের রাস্তা। জমির আইল ও পুকুর পাড়ের ওপর দিয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয়। রাস্তা নির্মাণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, মাদ্রাসাটি ১৯৬৯ সালে স্থাপিত হয়। কিন্তু দাখিল মাদরাসার কোমলমতি শিশুদের যাতায়াতের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো রাস্তা তৈরি হয়নি। গ্রামের সরু আইল যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। মাদরাসার তিন পাশে ধান ক্ষেত এবং এর পাশেই রয়েছে একটি বিশাল বড় পুকুর। আর সেই পুকুরের পাশ দিয়ে সরু চিকন আইল রাস্তা সেটাও পুকুর গর্ভে বিলীনের পথে।মাদ্রাসায় প্রবেশের রাস্তা না থাকায় শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমন অবস্থার সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে জানান এলাকাবাসী
শরিফ খান ঈদগাহ মাঠের সাবেক সভাপতি শেখ সাদী বলেন, মাদ্রাসাটি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত যাতায়াতের কোন রাস্তা না থাকায় চরম দুর্ভোগে পরতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের। শুষ্ক মৌসুমে জমির আইল দিয়ে চলাচল করতে হয়।বর্ষা মৌসুমে এই দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কখনও কখনও ভিজে যায় পরনের কাপড়সহ শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ও স্কুল ব্যাগ। এ কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অনিহা প্রকাশ করছে। বিদ্যালয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার কমে যাচ্ছে।
মাদ্রাসার ৩য় শ্রেণীর ছাত্র হাবিব এর বাবা সেলিম বলেন, রাস্তা না থাকার কারণে বাচ্চারা একা একা স্কুলে যেতে চায় না। বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি যে, পুকুরে পড়ে যায় কি না। এজন্য স্কুলে এসে বসে থাকতে হয়।
মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী শাম্মি বলেন, রাস্তা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে আধা কিলোমিটার পর্যন্ত কাঁদামাখা জমির আইল দিয়ে অনেক কষ্ট করে মাদ্রাসায় আসতে হয়।এতে অনেক সময় পড়ে গিয়ে বই ও পোশাক ভিজে যায়। উপজেলা কর্মকর্তারা যেন আমাদের এই মাদ্রাসায় চলাচলের রাস্তা করে দেন।
উক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আনতাজ আলী বলেন, রাস্তা না থাকায় অনেক ভোগান্তি হয়। স্কুলে ছাত্রছাত্রী আসতে চায় না। অভিভাবকরা বাচ্চাদের দিতে চান না। ইতিমধ্যে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই অন্য স্কুলে চলে গেছে। বর্ষা মৌসুমে আরো বেশী সমস্যা হয়। জমির আইল দিয়ে আসতে গিয়ে পাশে পুকুরে পরে বইখাতা ভিজে যাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে চরম বিপদে রয়েছে শিক্ষক- শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
স্থানীয় সাংবাদিক মিজানুর রহমান বলেন, এই মাদ্রাসার সবকিছু ঠিক থাকার পরেও শুধুমাত্র যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল হাকিম বলেন, আশেপাশের চার থেকে সাড়ে চার কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদ্রাসা নেই। বর্তমানে এই মাদ্রাসার ২০ জন শিক্ষক ও ৩৭৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীরা সারা বছর খুব কষ্ট করে মাদ্রাসায় যাতায়াত করে। প্রতিষ্ঠান থাকলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। বর্ষা মৌসুমে পুকুরটি যখন পানিতে ভরে যায় তখন কোন উপায় থাকে না। মাঝে মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। সরু রাস্তা হওয়ার কারণে ওই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনেক সময় পুকুরে পড়ে গিয়ে কাপড়, বই-পত্র ভিজিয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। এমতাবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও বছরের পর বছর ধরে সেই ভোগান্তি নিয়েই চলে আসছে শিক্ষালাভের প্রক্রিয়া।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার বলেন, ওই মাদ্রাসার রাস্তার সমস্যার বিষয়টি জেনেছি। রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।