
দেবাশীষ ঘোষ জয়, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের শিবালয়ে সদর উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি’র নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের হটকারী সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কলেজ পরিচালনা পরিষদ সভাপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এমন হওয়ায় এ বিষয়ে অভিভাবকসহ সচেতন মহলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, শিবালয় সদর উদ্দিন ডিগ্রী কলেজে উচ্চ-মাধ্যমিক একাদশ শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তি চলছে। এ কলেজে বিজ্ঞান, ব্যবসা ও মানবিক বিভাগ ছাড়াও বিএম শাখায় সর্বমোট ভর্তির আসন সংখ্যা রয়েছে ১২’শটি। আবেদন পড়েছে প্রায় সাড়ে সাত’শ। প্রতি আসনে ভর্তি ফি বাবদ অতিরিক্ত আদায় হচ্ছে এক হাজার টাকা করে। এতে বাড়তি আদায় হবে ৭ লাখের অধিক টাকা।
অথচ, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিপত্রনুযায়ী দেশের আংশিক এম.পি.ও. ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন ফি, সেশন চার্জ ও ভর্তি ফি বাবদ ঢাকা মেট্রোপলিটনে সাড়ে ৭ হাজার, মেট্রোপলিটন ঢাকা ব্যতিত ৫ হাজার, জেলা পর্যায়ে ৩ হাজার, উপজেলা ও মফস্বলে আড়াই হাজার টাকা হারে আদায়ের বিষয়টি স্পষ্ট রয়েছে। এ হিসেবে শিবালয় উপজেলা ও মফস্বল এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটিতে একাদশে ভর্তি বাবদ আড়াই হাজার টাকার স্থলে আদায় হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে।
একাদশ শ্রেনীতে ভর্তিচ্ছুকরা জানান, ভর্তি বাণিজ্য বন্ধে সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা কিছুতেই মানছেন না। নদী ভাঙ্গনের শিকারসহ গত করোনা মহামারীতে আমাদের এ অঞ্চলের অধিকাংশ পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল হয়ে পড়েছে। তা সত্ত্বেও কলেজ কর্তৃপক্ষ বাড়তি ফি-র বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দেয়ার দাবী জানান তারা।
শিবালয় উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাকিব হাসনাত আওয়াল জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি বাবদ বাড়তি অর্থ আদায়ের বিষয়ে আমরা কলেজ অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেছি। কিভাবে ২৫০০ টাকার বিপরীতে ৩৫০০ টাকা নিচ্ছে তার কোন সদুত্তর তিনি দেনিন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বোর্ড নির্ধারিত ভর্তি ফি আদায়ের অনুরোধ করেছি। তবুও তিনি তাতে কোন কর্ণপাত করছেন না।
কলেজ অধ্যক্ষ ড. বাসুদেব কুমার দে শিকদার বলেন, আমাদের বেসরকারি কলেজ হলেও তা আংশিক এম.পি.ও. ভুক্ত। প্রতি বছর একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির প্রক্রিয়া এভাবেই করা হয়। এছাড়া, উপজেলা ও মফস্বল এলাকার কলেজ গুলোতে একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি বাবদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ২৫’শ টাকা নেয়ার কথা বলা হলেও ৩৫’শ টাকা কেন আদায় করছেন এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ দৈনিক যায়ায়কাল সংবাদপত্রের প্রতিনিধিকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রনুযায়ী ফি আদায় করা হচ্ছে। তবে, বাড়তি টাকা কলেজ উন্নয়নসহ নন এমপিও শিক্ষক ও স্টাফদের বেতন বাবদ নেয়া হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদ সভাপতি মোঃ জাহিদুর রহমান বলেন, একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি বাবদ অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি আমি আজ অবগত হয়েছি। অধ্যক্ষকে আমার অফিসে ডাকা হয়েছে। দেখা যাক তিনি কি বলেন। তবে, সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে বাড়তি অর্থ আদায়ের কোন সুযোগ নেই।
মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শুক্লা সরকার বলেন, অভিযোগের বিষয়টি যাচাই করা হবে। সত্যতা মিললে অবশ্যই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।