
এ এম আব্দুল ওয়াদুদ, শেরপুর: “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা” কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রবিবার বিকেলে শেরপুর শহরের থানামোড়ে আয়োজিত পথসভায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ সময় সীমান্তে বাংলাদেশিদের পুশইন ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা ও পুশইনের ঘটনা ঘটছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। জনগণের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের পুশইন করুন, শেখ হাসিনাকে পুশইন করুন। তাকে বিচারের কাঠগড়ায় আনতে হবে।”
তিনি দাবি করেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে, এবং এখন তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন। একইসাথে অভিযোগ করেন, ভারত সরকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিয়ে সীমান্ত পুশইনকে উৎসাহিত করছে।
আলোচনায় উঠে আসে গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী লীগের কথিত সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যও। নাহিদ বলেন, “গোপালগঞ্জে যারা হামলা চালিয়েছে, তারা আজও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় রয়েছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই — মুজিববাদকে বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়াতে দেব না।”
তিনি আরো যোগ করেন, প্রশাসনে এখনো যারা আওয়ামী লীগপন্থী, তাদের বিরুদ্ধেও সংগঠিত গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
শেরপুরের স্থানীয় উন্নয়ন নিয়েও তীব্র হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “এখানে হাসপাতাল থাকলেও নেই মানসম্পন্ন চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল, চাকরির সুযোগও নেই। অথচ ক্ষমতার অপব্যবহারে আওয়ামী ঘরানার লোকেরা বিদেশে সম্পদ গড়েছে।”
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “বিগত সময়ের ধান্দাবাজ, সুযোগসন্ধানী ব্যক্তিরাই সিস্টেম দখলে রেখেছিল। তারা এখনো প্রভাব বিস্তার করছে।”
দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “সংকটে যে কর্মী রাজপথে থাকে, সেই প্রকৃত কর্মী। ফেসবুকে সেলফি দিয়ে নেতা হওয়া যায় না। নেতা হতে হলে কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়।”
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, দলীয় পরিচয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন মাইলস্টোন কলেজে অগ্নিকাণ্ডে হতাহত শিশুদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আমি দগ্ধ হৃদয় নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। আজও আমরা জানতে পারিনি কারা এর পেছনে জড়িত। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।”
পথসভা শুরুর আগে শেরপুর শহরের শহিদ মাহবুব চত্বর থেকে ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হয়। এতে অংশ নেয় এনসিপির কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দ, জেলার কর্মী এবং সাধারণ জনগণ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীনসহ দলের অন্যান্য নেতাকর্মীরা।