নিজস্ব প্রতিবেদক : ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মা এবং তার বেঁচে যাওয়া দেড় বছর বয়সী শিশুর পরিচয় পাওয়া গেছে। রোববার সকালে ভালুকা হাইওয়ে থানার ওসি মো. আতাউর রহমান জানান, শিশুটির নাম মেহেদী হাসান। তার মায়ের নাম জায়েদা খাতুন; বয়স ৩২ বছর। নিহত জায়েদা সুনামগঞ্জ জেলার দুয়ারা উপজেলার খুশিউড়া গ্রামের মো. রমিজ উদ্দিনের মেয়ে। নরসিংদী জেলার পলাশ থানার গজারিয়া ইউনিয়নের কফিল উদ্দিনের ছেলে মো. ফারুক মিয়া তার দ্বিতীয় স্বামী। তিনি পেশায় ট্রাক চালক।
ওসি বলেন, “জায়েদা তার দেড় বছর বয়সি ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে ভালুকার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। জায়েদার দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিল নরসিংদী জেলার পলাশ থানার গজারিয়া ইউনিয়নের কফিল উদ্দিনের ছেলে মো. ফারুক মিয়ার সঙ্গে।
“ফারুকের প্রথম স্ত্রীর ঘরে তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এ কারণে তার দ্বিতীয় বিয়ে পরিবার থেকে মেনে নেয়নি। ফলে জায়েদার সঙ্গে ফারুকের যোগাযোগ না থাকায় তিনি ছেলেকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকতেন।”
ঘটনার দিন রাতে রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে জয়েদা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে প্রাথমিক ধারণা এ পুলিশ কর্মকর্তার।
নিহত জায়েদার বড় ভাই মো. রবিন মিয়া বলেন, “আমার বোন দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল বলে শুনেছি। ফেইসবুকে আমরা তার মৃত্যুর খবর পেয়েছি। মরদেহ নিতে ময়মনসিংহে আসছি।”
নিহত জায়েদা খাতুনের দ্বিতীয় স্বামী ফারুক মিয়া বলছিলেন, “আনুমানিক ৭-৮ আট বছর আগে জায়েদাকে দ্বিতীয় বিয়ে করি। তবে, পরিবার বিষয়টি মেনে নেয়নি। এরপর থেকে সে বিভিন্ন এলাকায় থাকত। আমার সঙ্গে বিয়ের পর আরও তিনটি বিয়ে করেছে বলে শুনেছি।
“এখন আমি প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় থাকি। জায়েদাও তার ছেলেকে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় থাকত বলে শুনছিলাম। তবে তার নির্দিষ্ট ঠিকানা আমার জানা নেই। গত এক মাসে আমার সঙ্গে তার তিনবার দেখা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ফেইসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি, জায়েদা মারা গেছে। তাই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মেহেদী হাসান আমার সন্তান না।
“জায়েদার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তার ভাই সুনামগঞ্জ থেকে মরদেহ নিতে আসছে।”
গত ৯ মে রাত আনুমানিক তিনটার দিকে ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন জায়েদা। এ ঘটনায় তার ছেলে মেহেদী বেঁচে গেলেও তার মাথায় আঘাত লাগে।
বতর্মানে শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর জায়েদার মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে মা হারা শিশু মেহেদীর চিৎকারে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনার পরে মাকে জড়িয়ে ধরে শিশুটির কান্নার ভিডিও এবং ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা দেখে অনেকের হৃদয় সিক্ত হয়।
ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ওই শিশু ও তার মা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। তবে কিভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা জানা যায়নি।
“পরে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে পুলিশ ওই শিশু ও তার মাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখান মা মারা গেছে। তবে সেখানে আহত শিশুটির চিকিৎসা চলছে।”
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ফারজানা কাওছার বলছিলেন, “শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ফলে অবুঝ শিশুটি কান্নাকাটি করছে। শিশুটি মাথায় আঘাত পেয়েছে। তবে আমরা তাকে নিয়মিত মনিটরিং করছি।”