মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সলিমপুর ইউনিয়ন গণশুনানি, জনগণের সেবায় নতুন দিগন্ত

মো: রমিজ আলী, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম): জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন শুরু করেছে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ—ইউনিয়ন পর্যায়ে গণশুনানি। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালে সীতাকুণ্ড উপজেলার ১০ নম্বর সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমী এই আয়োজন। আয়োজন করে সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ।

সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম। এ সময় উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম জেলার ১৯১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বর্তমানে ৩৬টিতে নেই কোনো জনপ্রতিনিধি। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন অনন্য উদ্যোগ নিয়েছে—সরাসরি ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে জনগণের সমস্যার কথা শোনা এবং তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা করা। এটি কেবল প্রশাসনিক সেবা প্রদান নয়, বরং জনগণের আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে প্রশাসনকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার এক অনন্য প্রয়াস।

দিনব্যাপী গণশুনানিতে সলিমপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগ তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক মনোযোগ সহকারে সেগুলো শোনেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানযোগ্য বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার মান উন্নয়ন, রাস্তা মেরামত, বিদ্যুৎ সংযোগ, আইনশৃঙ্খলা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ—প্রধানত এসব বিষয় উঠে আসে গণশুনানিতে।

অবশিষ্ট জটিল সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক আশ্বস্ত করেন যে পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক প্রতি বুধবার নিজ কার্যালয়ে গণশুনানি করেন। তবে এবার কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে এনে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এতে জনগণ সরাসরি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সেবার মানোন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

গণশুনানিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, “জনগণের সমস্যা সমাধান করাই প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব। মানুষকে সেবা পেতে দৌড়াতে হবে না, প্রশাসন তাদের দোরগোড়ায় যাবে—এটাই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের গণশুনানি কেবল সমস্যা সমাধান নয়, বরং জনগণ ও প্রশাসনের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জেলা প্রশাসক ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে একটি জারুল গাছের চারা রোপণ করেন। তিনি বলেন, বৃক্ষরোপণ শুধু পরিবেশের জন্য নয়, টেকসই উন্নয়নের জন্যও অপরিহার্য।
গণশুনানি শেষে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবা প্রদানে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন।

উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে শুধু গণশুনানিই নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ জেলে পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন জেলা প্রশাসক।

গণশুনানিতে অংশ নেওয়া সাধারণ মানুষ এ উদ্যোগকে যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, আগে সমস্যার সমাধানে দফতরে দফতরে ঘুরতে হতো; আজ জেলা প্রশাসক নিজে এসে কথা শুনেছেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন—এটি সত্যিই প্রশংসনীয়।

সলিমপুর ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত এই গণশুনানি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের বাস্তব পদক্ষেপ। ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে ইউনিয়ন পর্যায়ে সুশাসন ও উন্নয়ন কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন।

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ