
আব্দুর রহমান, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সমাজসেবা অফিসার মোঃ শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেসরকারি এতিমখানার ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বিতরণে জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
এ ধরনের অভিযোগ নতুন নয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ। অভিযোগ রয়েছে, সদর উপজেলার ২৭টি ক্যাপিটেশন গ্রান্টভুক্ত বেসরকারি এতিমখানার মোট ৬শ ৭৭ জন নিবাসীর জন্য জনপ্রতি ১০০০ টাকা করে ঘুষ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাটি এলাকার “আয়ফুল বেগম মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স ও এতিমখানা”র ১৬ জন এতিম শিশুর জন্য ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বাবদ বরাদ্দ হওয়া ১ লাখ ৯২ হাজার টাকার চেক আনতে গেলে, সমাজসেবা অফিসার শরীফুল ইসলাম সাংবাদিক আব্দুর রহমানের কাছে ১৬ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন অর্থাৎ জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে। এছাড়াও সদর উপজেলার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে চেক প্রদানকালে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা।
সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এই চেক প্রদানের ক্ষেত্রে সমাজসেবা অফিসার শরীফুল ইসলাম তার নিজ অফিস কক্ষে বসেই এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন। ভুক্তভোগিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে অফিসারের চাহিদা মতো অর্থ প্রদান করতে হচ্ছে। না হলে সমস্যা হতে পারে।
এ বিষয়ে দৈনিক সাতনদী পত্রিকার বার্তা সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, “আমি এবং আয়ফুল বেগম মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স ও এতিমখানার তত্বাবধায়ক হাফেজ মাছুম বিল্লাহ চেক আনতে গিয়েছিলাম। তিনি সরাসরি ১৬ হাজার টাকা চাইলেন। আমি হতভম্ব হয়ে যাই। পরে বিষয়টি আয়ফুল বেগম মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স ও এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট সমাজসেবক মোঃ শফিকুজ্জামান রাতেই সমাজসেবা কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন এবং দীর্ঘ আলোচনার পর বিষয়টি রফাদফা হয় বলে জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ বলেন, “চেক প্রদানের জন্য টাকা দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। আপনারা ঘুষ দিবেন না। যদি উনি চেক না দেন তাহলে আমাকে জানাবেন।”
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ঘুষ নেওয়া এবং দেওয়া দুটিই আপরাধ। আপনারা টাকা দিবেন কেন? এটাও অন্যায়। বিষয়টি আমি দেখবো। গত শুক্রবার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ আশ্বাস দিলেও রোববার পুনরায় ঘুষ দিয়ে চেক নিতে হচ্ছে বলে একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ক্যাপিটেশন গ্রান্ট হলো সরকার কর্তৃক স্বীকৃত এতিমখানা ও অনাথ শিশুদের জন্য নির্ধারিত আর্থিক সহায়তা, যা সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে প্রেরণ করা হয়। তবে বাস্তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এই টাকা পেতে গিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে বাধ্য হয় এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে এমন প্রত্যাশা সকলের।