মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মুঘল স্থাপত্যের ছোঁয়া

সাতক্ষীরার ঐতিহ্য তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ

এসএম আশরাফুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়ে এক ইতিহাসের সাক্ষী—তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘মিয়ার মসজিদ’ নামেই বেশি পরিচিত, তবে সরকারি নথিতে রয়েছে ‘খান বাহাদুর কাজী সালামত উল্লাহ জামে মসজিদ’ নামটি। প্রায় ১৬৫ বছরের পুরোনো এই স্থাপনাটি শুধু একটি ইবাদতের জায়গা নয়, এটি একসময়ের জমিদারী ঐতিহ্য, মুসলিম স্থাপত্যশৈলী এবং স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতীক।

জনশ্রুতি আছে, তেঁতুলিয়ার জমিদার মৌলভি কাজী সালামত উল্লাহ খান বাহাদুর উনিশ শতকের মাঝামাঝি, ১৮৫৮-৫৯ সালে মুঘল স্থাপত্যের অনুকরণে ছয় গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদ নির্মাণ করেন। দেখতে অনেকটা টিপু সুলতানের বংশধরদের আমলের স্থাপনার মতো, যার মধ্যে আছে আভিজাত্যের ছোঁয়া ও সূক্ষ্ম কারুকাজ। মসজিদটির অনুপ্রেরণা নাকি এসেছে আগ্রার তাজমহলের নির্মাণশৈলী থেকেও।

মসজিদের সামনে দাঁড়ালে প্রথমেই চোখে পড়ে সাতটি বিশাল দরজা—প্রতিটির ওপর রঙিন কাচের ঘুলঘুলি, যেখান দিয়ে আলো এসে ভেতরটা এক স্বপ্নময় আবহ তৈরি করে। চুনসুরকি ও চিটাগুড়ের গাঁথুনিতে তৈরি এই স্থাপনাটির ১৫ ফুট উচ্চতার ছয়টি বড় গম্বুজ, ৮ ফুট উচ্চতার ১৪টি মিনার, আর চার কোণে আছে ২৫ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার। মসজিদের ভেতরে পাঁচ সারিতে একসঙ্গে ৩২৫ জন এবং বাইরের চত্বরে আরও ১৭৫ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

পাশেই রয়েছে একটি সুগভীর পুকুর। পুকুরের তলদেশ থেকে পাথরের সিঁড়ি উঠে গেছে মসজিদের চত্বরে—যা এখনকার দিনে খুব কম মসজিদেই দেখা যায়। একসময় মসজিদটি সমতল থেকে অনেক উঁচুতে ছিল, সময়ের সাথে সাথে চারপাশের জমি সমান হয়ে গেছে।

১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটিকে প্রত্ননিদর্শন হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু অযত্ন ও অবহেলায় আজ মসজিদের সৌন্দর্য ম্লান। মেঝে ও পশ্চিম দেয়ালে ফাটল ধরেছে, ছোট আটটি মিনার ভেঙে পড়েছে, বাকিগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে ছড়িয়ে রয়েছে অজানা মানুষের কবর, যেগুলোও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।
যদি দ্রুত সংস্কার হয়, তবে এই মসজিদ কেবল ধর্মীয় উপাসনার কেন্দ্রই নয়, বরং ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। খুলনা-পাইকগাছা-কবি সিকান্দার আবু জাফর সড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় এখানে ভ্রমণকারীদের আগমনও সহজ হবে।

স্থানীয়রা মনে করেন, এটি পুনর্নির্মাণ ও সংরক্ষণ করা গেলে সাতক্ষীরার পর্যটন মানচিত্রে যুক্ত হবে নতুন এক গন্তব্য—যেখানে মিলবে ইতিহাস, স্থাপত্য আর আধ্যাত্মিকতার অনন্য সংমিশ্রণ।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ