রানা সরদার , স্টাফ রিপোর্টার: বিস্ফোরক মামলার আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল আলমের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বেলাল হোসেন সৌখিন নামের বিএনপির ওই নেতা। এ ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায়।
মুঠোফোনে বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সাবেক ওই উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে তিনি এই চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে দুই নেতার কথোপকথনের ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ডিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
চাঁদা দাবি করা বেলাল হোসেন সৌখিন বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক। অপরদিকে সামছুল আলম খান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ।
জানা যায়, গত সোমবার ৪ নভেম্বর রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার গোবরচাঁপা হাট নামক স্থানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া অবিস্ফোরিত ৬টি ককটেল উদ্ধার করে থানা পুলিশ। ককটেল বিস্ফোরণ ও উদ্ধারের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের ৪০ নেতাকর্মীর নামে বিস্ফোরক মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর এই মামলার বাদী সেই বেলাল হোসেন সৌখিন।
মামলার প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বাবর আলীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে বিষয়টির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বদলগাছী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আওরঙ্গজেব চৌধুরী মানিক মুঠোফোনে বলেন, আমি আমার দলের নেতাদের সাথে আলোচনা কের তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেইভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অপরদিকে বিএনপির এক নেতা ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, এই মামলা তাদের কাছে এখন চাঁদা আদায়ের রশিদ হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে বেলাল হোসেন সৌখিন বলেন, ঘটনাটি অনেক আগের। উপজেলা পরিষদ বাতিল হওয়ার পর জানতে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মানিককে এল লাখ টাকা দেওয়ার খবর পাই। সেই জন্যই আমিও তাকে ফোন করে বলেছি মানিককে দিলে আমাকেও দুই লাখ টাকা দিতে হবে। আর চেয়ারম্যানের মরণ মোর হাতে ছিল এমন ডায়লগটার প্রশংসা করলে তিনি হাসতে থাকেন।
জানতে চাইলে বদলগাছীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল আলম খান বলেন, বিএনপি নেতা সৌখিন আমার কাছে ফোন করে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করার কারণে গোবরচঁপা হাটে ঘটে যাওয়া ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় আমাকে ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় এটি সাজানো মিথ্যা মামলা। আমি এর তীব্র প্রতিবাদসহ সঠিক বিচার দাবি করছি।
জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদি চৌধুরী টিপু মুঠোফোনে বলেন, ওই কল রেকর্ডের ঘটনা এখনকার না, এটা মামলার অনেক আগের। বিষয়টি গতকাল আমি জেনেছি। তবে বিএনপির নাম ভেঙে যে এ ধরনের কাজ করবে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির একজন বলেছেন এই মামলাটি তাদের কাছে চাঁদা আদায়ের রশিদ এমন প্রশ্নে সেই বিএনপি নেতার নাম জানতে চান তিনি। এছাড়া তিনি বলেন, এ ধরনের কিছু করার কোনো সুযোগ নেই।
আর সম্প্রতি হওয়া বিস্ফোরক মামলায় সঠিকভাবে তদন্ত করবেন বলে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ্জাহান আলী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাদের কথোপকথনটিতে শোনা যায়— পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
সৌখিন: হ্যালো, ভাই আমি চ্যাংলার সৌখিন।
সামছুল আলম: হ্যাঁ ভাই, ভালো ভাই?
সৌখিন: চিনতে পারছেন।
সামছুল আলম: হ্যাঁ ভাই চিনতে পারছি “ক”
সৌখিন: আপনি ওই ম্যানক্যাক (মানিককে) বলে ওই ইয়ে দিছেন। দু’লাখ টাকা বলে দিছেন ম্যানক্যাক।
সামছুল আলম: কোনো ট্যাকা পয়সা আছে ভাই? এলা গুজব কুটি থ্যাকা শুনলি !ক”
সৌখিন: আমি শুনলাম ম্যানক্যাক আপনে দু’লাখ টাকা দিয়েছেন।
সামছুল আলম: না না না ভাই।
সৌখিন: তে ম্যানক্যা আপনাক বাঁচাতে পারবে?
সামছুল আলম: বাঁচা মরা এখন আল্লাহ্’র হাতে ভাই। আল্লাহ্ এখন ভাগ্যে কি লিখে রেখেছে।
সৌখিন: আল্লাহ্’র হাতে ঠিক আছে, কিন্তু আল্লাহ্ যে আমার হাতে লিখে রেখেছে আপনার, এটার কি হবে কন।
সামছুল আলম: তাই না?
সৌখিন: হ্যা, তে আপনি ম্যানক্যার সাথে যোগাযোগ করবেন, আর আমি বাল ফ্যালাবো? ভাগ মিলতেছে না।
সামছুল আলম: না ভাই, না না না।
সৌখিন: আপনি আমার এই নং এ বিকাশ, নগদ সব আছে। আপনি এক লাখ তাহলে এখানে পাঠায়ে দেন।
সামছুল আলম: হাহাহা করে হাসছিল
সৌখিন: তাহলে আপনে মনে করেন ম্যানক্যাক টাকা দিবেন মানে? ম্যানক্যা দলের কে? ওই সাওয়ার ব্যাটা দলের কে?
সামছুল আলম: না ভাই না, এগুলো মিথ্যে কথা ভাই।
সৌখিন: তাহলে এলা গুজ উঠে কেন? আপনে তাহলে ম্যানক্যাকে ফোন করেন। পাশে থেকে আরেকজনকে বলতে শোনা যায় সে কোন জায়গায় আছে খোঁজ নাও, সঙ্গে সঙ্গে তার সুরে জানতে চান আপনি কোথায় আছেন। না হলে আপনি কই আছেন কন তো?
সামছুল আলম: না ভাই এলা মিথ্যে কথা জবাবে বলেন তিনি।