
মো. রমিজ আলী, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম): চালের টিনেও ফুটো। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে এর ওপরের অংশ প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা। সেই ঘরেই স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন ফকির চান দাশ। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে প্রথমবারের মতো কোনো জেলে হিসেবে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
গত সোমবার রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাত থেকে ব্রোঞ্জপদক গ্রহণ করেন ৭০ বছর বয়সী এই জেলে। সারা দেশের ১৬ জন জেলে ৯টি ক্যাটাগরিতে এ পদক পান। তাঁদের মধ্যে সীতাকুণ্ডের ফকির চান দাস অন্যতম।
ফকির চান দাস কুমিরা ইউনিয়নের উত্তর জেলেপাড়ায় বসবাস করেন।বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, খালের পাড়ে মাত্র দুই শতক জমির ওপর টিনশেডের ভাঙাচোরা ঘর ফকির চানের। প্রথমে ঢুকতেই দেখা গেল ভাঙা দরজা। ভেতরে ছোট বারান্দা আর বাঁশের বেড়ার তৈরী চারটি কক্ষ। পাঁচ কন্যার জনক ফকির চান তার তিন কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট দুই মেয়ে এখনো পড়াশোনা করছে। বড়জন কণিকা দাশ স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষে, ছোট পূজা দাশ পড়েন একাদশ শ্রেণিতে।ফকির চান নিজে পড়াশোনা না করলেও মেয়েদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে বলে জানান ফকির চান। বলেন, অনটনের মধ্যে চলছে তাঁর সংসার।
ফকির চানের বংশধররা মাছ ধরতেন। সেই পরম্পরায় তিনিও একই পেশায় নিয়োজিত।
আজ য়ায়যায়কালকে বলেন, ইলিশের মৌসুমে দাদন নিয়ে দুজন কর্মচারী রাখতে হয় তাঁর। মাসে জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা মজুরি, নাশতা আর খাওয়াদাওয়ার সব খরচ দিতে হয় তাঁদের। এরপর সংসার চালানোর পাশাপাশি দাদনের টাকা শোধ করতে হয় তাঁকে। বর্তমানে তাঁর প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে।
এই দিকে বাবার পদক পাওয়ার খবরে খুশি ছোট মেয়ে পূজা দাশ। তিনি যায়যায়কালকে বলেন, তাঁর বাবার পদক পাওয়া তাঁদের জন্য খুবই গর্বের। বাবা কখনো অসৎ উপায়ে আয় করেননি। সরকারি নিয়ম মেনে মাছ ধরেন। অভাব আছেন, তবু অন্যায়ে নেই। একজন সাক্ষরজ্ঞান না থাকা মানুষ রাষ্ট্রের প্রধানের পাশে দাঁড়িয়ে পুরস্কার নিলেন—এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে।আমি আমার বাবাকে নিয়ে গর্ব করি এবং আমার বাবা শুধু আমাদের গর্ব না সারা সীতাকুণ্ডের গর্ব।
আইন মেনে মাছ ধরায় ফকির চানের সুনাম সমগ্র এলাকাজুড়ে।