
মোঃ রমিজ আলী, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে নির্বিচারভাবে গাছ কাটা ও পাচারের মহোৎসব। পাহাড়ে গড়ে ওঠা একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট নিয়মিতভাবে মূল্যবান গাছ কেটে বন উজাড় করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ— বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার আশীর্বাদেই এই গাছ কাটা সম্ভব হচ্ছে। যেভাবে চলছে গাছ কাটা ও পাচার
সূত্রে জানা যায়, রাতের আঁধারে ট্রাক ও পিকআপে করে গাছ কেটে নিচু পথে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন করাতকল ও স্ক্র্যাপ কারখানায় তা বিক্রি করা হয়।
এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন—মো: এরশাদ, মো: বাছা মিয়া, মো: বেলাল, মো: আজগর, মন কুমার ত্রিপুরা এবং সুফিয়ান সহ আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, এরা প্রত্যেকে আলাদা এলাকায় গাছ কেটে বন থেকে নামানোর দায়িত্বে থাকে। ফলে পুরো এলাকাজুড়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।
গত ৪ অক্টোবর রাতে স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্যোগে অভিযান চালিয়ে ৯৫ পিস পাহাড়ি গাছ জব্দ করা হয়। কিন্তু সেই ঘটনার পরও কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়নি বনবিভাগ। বরং চক্রটি আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিদিন রাতেই ট্রাক ভর্তি গাছ নিচে নামানো হয়। আমরা প্রতিবাদ করলে হুমকি দেওয়া হয়। কিছু প্রভাবশালী নেতা তাদের রক্ষা করছে।”
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি
বিশেষজ্ঞদের মতে, এইভাবে নির্বিচারে গাছ কাটা চলতে থাকলে কুমিরা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পাহাড়ে ভূমিধস, বন্যা ও মাটির ক্ষয় বাড়বে। এছাড়া, স্থানীয় প্রাণিকুলের বাসস্থান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে— যার ফলে জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
পরিবেশবিদ ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “পাহাড়ি গাছ নিধনের ফলে শুধু পরিবেশ নয়, পুরো অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে।”
বনবিভাগের নীরবতা ও স্থানীয়দের ক্ষোভ
এতো বড় অপরাধ সংঘটিত হলেও বনবিভাগের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কিছু কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছেন।
একজন প্রবীণ নাগরিক বলেন, “বনবিভাগ যদি সত্যি আন্তরিক হতো, একদিনেই এই সিন্ডিকেট বন্ধ করা যেত। কিন্তু তারা দেখেও দেখছে না।”
প্রশাসনের কঠোর নজরদারির দাবি
স্থানীয় সচেতন মহল ও পরিবেশ সংগঠনগুলো প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছে, সীতাকুণ্ডের কুমিরা, রহমতপুর, হিঙ্গুরিপাড়া ও ত্রিপুরাপাড়ায় অবিলম্বে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গাছ কাটা বন্ধ করা হোক। এছাড়া, দোষী কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
যে হারে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় বন উজাড় চলছে, তাতে ভবিষ্যতে এই অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এখনই যদি শক্ত হাতে সিন্ডিকেটের কার্যক্রম বন্ধ করা না হয়, তাহলে এর মাশুল দিতে হবে পুরো এলাকার মানুষকে।
 
				











