
মো. রমিজ আলী, সীতাকুণ্ড: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক ঘরবাড়ি কোমরপানিতে ডুবে গেছে। ফলে শিশু, বৃদ্ধসহ হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে সড়ক।এতে চমর বিপাকে পড়েন স্কুল কলেজ পড়ুয়া সাধারণ ছাত্র -ছাত্রী।
সরজমিনে দেখা যায়, মাষ্টার পাড়া,পশ্চিম মাষ্টার পাড়া,দাশ পাড়া, রসুলপুর এলাকা,মাদ্রাসা রোডসহ সমগ্র এলাকায় হাঁটু পরিমান পানি দিয়ে সাধারণ পথচারী থেকে শুরু করে কোমল মতি ছাত্র -ছাত্রী এবং স্কুল কলেজ গ্রামী ছাত্র-ছাত্রীরা এই ময়লা ও দুর্গন্ধ যুক্ত পানি দিয়ে চলাফেরা করছে।
সীতাকুণ্ড আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার আগেই মাত্র তিন ঘণ্টায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর ছয়টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় মোট বৃষ্টি হয়েছে ২০৮ মিলিমিটার, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টি হলেই অতি ভারী বর্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড আবহাওয়া কার্যালয়ে আবহাওয়াবিদ হাসানুজ্জামান বলেন, এখন বিরতি দিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বিকেলের দিকে বৃষ্টি বাড়তে পারে। লাগাতার অতি ভারী বর্ষণ হলে পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এখন লাগাতার অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের পাহাড়ঘেরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি। গতকাল রাত থেকেই ওই এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে অনেক বাসিন্দা ঘরেই আটকা পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পানি আমাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। সকাল হতেই দেখি, ঘরের ভেতরে কোমরপানি। এর পর থেকে বের হতে পারছি না। রান্না করারও উপায় নেই। আশপাশে দোকানপাটও নেই।’
আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়াও উপজেলার কুমিরা, সৈয়দপুর, বারৈয়ারঢালা, মুরাদপুর এবং সীতাকুণ্ড পৌরসভা নামার বাজার এলাকার বেশ কিছু জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি থাকায় যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে অনেক সড়কে। প্রবল স্রোতের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারাও ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এ কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ছুটি ঘোষণা করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি কুমিরা ইউনিয়নের মছজিদ্দা মডার্ন কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল। বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সদস্য বলেন, বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে হাঁটুপানি। আবার স্রোতও প্রবল। শিশুদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় আজ ছুটি দেওয়া হয়েছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, তাঁর সরকারি বাসভবনের নিচতলা পানিতে ডুবে গেছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরেও হাঁটুপানি। ভাটিয়ারীর আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ যেসব জায়গায় পানি উঠেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা অথবা শুকনা খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে লোক পাঠানো হয়েছে।