
মো. নাঈম ইসলাম, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ(এলএসডি) একটি ভাইরাসজনিত রোগ। দেশে ২০১৯ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম এলএসডি রোগটি দেখা দেয়।
পরবর্তী ২-৩ মাসের মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা উপজেলায় পশুদের মধ্যে দ্রুত এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগ সাধারণত কম বয়সী হৃষ্টপুষ্ট বাছুর-গরু বেশি আক্রান্ত হয়। তবে মহিষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে এ রোগটি প্রতিবছরে বর্ষা মৌসুমে প্রতিফলন হয়। এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এইরোগ গবাদিপশুকে আক্রান্ত হওয়ায়, আতংকিত হয়ে পড়েছেন পশুর মালিকরা।
এ বিষয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সুমনা আক্তার জানান, বর্তমান সময়ে লাম্পি স্কিন ডিজিজ এটি একটি আলোচিত নতুন রোগ। এ রোগে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই।
খামারি ও পশু পালনকারী ভাই-বোনদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যেহেতু রোগটি বর্ষাকালে হয় তাই গরুর ঘরের আদ্রতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবশ্যই ঠিক রাখতে হবে। খামারের ভেতরসহ আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা গুরুত্বপূর্ণ । যেন মশা-মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মশা-মাছি যেন কামড়াতে না পারে। এ বিষয়ে আক্রান্ত গরুকে মশাড়ি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। কারণ আক্রান্ত গরুকে কামড়ানো মশা-মাছি সুস্থ গরুকে কামড়ালে এই রোগের সংক্রমণ হতে পারে। যদি পশুর এ রোগ হয়ে যায়, তাহলে আপনারা পশুকে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করবে আর জ্বরের মাত্রা যদি বেশি হয় তাহলে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়াবে তবে এন্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়াবেন না। আর মাথায় পানি দিবেন। পা ও শরীর মুছে দিবেন। সম্ভব হলে থালায় পানি দিয়ে ধুয়ে দিবেন। তিন থেকে চার দিন পরিষ্কার করবেন লাম্পি ও জ্বর কমে যাবে।
তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে গরুর লাম্পি ফেটে যায়। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মশা-মাছি না বসে। আক্রান্ত ক্ষত স্থান পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার ক্ষেত্রে আপনারা নারিকেল তেল সঙ্গে নিকোফেট পাউডার ব্যবহার করতে পারবেন। দপ্তর থেকে খাওয়া সোডা ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি খাওয়াসোডা ব্যবহার করিতে পারবেন আবার খামারে সিটাতে পারবেন। আক্রান্ত স্থানটি শুকনো রাখতে হবে। প্রয়োজনে আপনারা আমাদের ভেটেরিনারি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমরা রয়েছি আপনাদের পাশে।
ড. সুমনা আক্তার বলেন, যেহেতু সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কিছু আংশিক চরাঞ্চল এলাকা রয়েছে । চরাঞ্চলের উদ্দেশ্যে বলেন, কিছু চরাঞ্চল এলাকায় পশু রয়েছে, পশুকে নিয়ে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারা পশুর সেবার জন্য আমাদের মেডিকেল টিম রয়েছে ৪টি। চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ করে সেবা নিতে পারে। তাদের কাছে অনেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছে। আবার আমাদের উপসহকারী রয়েছে তারা দুর্গম চরাঞ্চলে গিয়ে সেবা দিচ্ছে। খামারিরা সেবা গ্রহণ করেছে।
তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, যেহেতু এটা নতুন রোগ তাই সকলকে এ রোগের মোকাবেলা করতে হবে। তাহলে আমরা অতি সহজে এ রোগ থেকে মুক্তি পাবো।
উপজেলায় আক্রান্ত গবাদি পশুর সংখ্যা ২৫১৫টি। ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছে ২০২০টি। পশুর পালনকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, মেডিকেল ক্যাম্প জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদেরকে নিয়ে জনসভা করা হয়েছে ৭৮টি, লিফলেট বিতরণ ৩ হাজার টি। বিভিন্ন এলাকায় ৬টি ক্যাম্প করে ৭৫০টি পশুকে টীকা প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যথাযথ খামার ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে এবং পশুর সব ধরনের রোগের চিকিৎসার চলমান রয়েছে।