
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় রাজনৈতিক ভোলবদলের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাতক্ষীরা রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক হিসেবে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওন। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার সময়কালে দলটিতে যোগদান করেও এখন নিজেকে বিএনপিপন্থী হিসেবে দাবি করছেন তিনি। তার এই আকস্মিক পরিচয় বদলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
দলীয় সূত্রে প্রাপ্ত ছবিতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই শাওন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটিতে যোগদান করেন। সেই যোগদান অনুষ্ঠানে তার পাশে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক (সদ্য গ্রেফতার) হারুন-অর-রশিদকেও উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। সে সময় তিনি নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবুর বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে সাতক্ষীরা রেজিস্ট্রি অফিসে প্রভাব খাটাতো। এছাড়া ১৫ আগস্ট উপলক্ষে পোস্ট আরো তৈরি করে এ শাওন। এলাকায় থেকে লম্পট শহর বলে চেনে। সম্প্রতি সাতক্ষীরার শিবতল এলাকায় এক নারীর সাথে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় এলাকাবাসী থাকে আটক করে। পরে প্রেসক্লাবের পরিচয় দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে এই শাওন।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে ভালো থাকা শাওন সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ভিন্ন পরিচয় সামনে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি এখন নিজেকে বিএনপির সমর্থক ও নেতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন মহলে এই পরিচয় ব্যবহার করছেন। তার এই আকস্মিক ভোলবদলকে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা “সুবিধাবাদী রাজনীতির নির্লজ্জ্ব রূপ” বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্যক্তিগত সুবিধা আদায় এবং নিজের নানা অপকর্ম ঢাকার জন্যই শাওন এই দ্বৈত নীতি গ্রহণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ ব্যবহার করে রেজিস্ট্রি অফিসে একটি সিন্ডিকেট পরিচালনা, দলিল সম্পাদনে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও অর্থ আত্মসাতের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও রয়েছে বহুবিবাহ ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগ, যা থেকে জনদৃষ্টি সরাতেই তিনি বারবার রাজনৈতিক পরিচয় বদলাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শাওনের এই সুবিধাবাদী আচরণে সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরাই ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগের কর্মীরা বলছেন, শাওন দলের দুর্দিনে ছিলেন না, সুদিনে এসে সুবিধা নিয়েছেন এবং এখন আবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে, বিএনপির কর্মীরাও এ ধরনের সুবিধাবাদী ব্যক্তিকে দলে স্থান দেওয়ার বিষয়ে সন্দিহান ও সতর্ক।
অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এ ধরনের সুবিধাবাদী ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্ক থাকা, যারা কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থে দলের নাম ব্যবহার করে এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। শাওনের এই রাজনৈতিক ভোলবদল প্রমাণ করে, আদর্শ নয়, বরং ব্যক্তিগত লাভই তার রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি।