
পাভেল ইসলাম মিমুল, উত্তরবঙ্গ: রাজশাহীতে স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রতিকার ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও উঠেছে।
রোববার (১২ অক্টোবর) রাজশাহী জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে এ দাবি জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। এতে সকল সরকারি দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় সিনিয়র সাংবাদিক সাইদুর রহমান বলেন, রাজশাহীতে জালিয়াতি চক্র স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে, জাল স্বাক্ষর করে বিভিন্ন থানায় নিরীহ মানুষজনের বিরুদ্ধে মামলা করছে, মামলা করে জেলে ঢুকাচ্ছে। একশ্রেণীর অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা এদেরকে সহযোগিতা করছে। এরকম ঘটনা কিছু ঘটেছে। ব্যাকডেটে স্ট্যাম্প করে সই করে বলছে- এত টাকা পাব, পুলিশকে হাত করে মামলা করছে।
তিনি বলেন, এটা মামলা করার কোনো বিধান নাই। গায়েবি কিছু অভিযোগ পাঠিয়ে দিচ্ছে, কী অভিযোগ- নাম ঠিকানা কিছু নাই। কিছুদিন আগে একটা ঘটনা ঘটেছে, গোরহাঙা এলাকাবাসী কোনো নাম নেই, শুধু সিগনেচার দিয়ে একটা অভিযোগ দিয়েছে পুলিশ কমিশনার মহোদয়কে; উনি আবার এটা পাঠিয়ে দিয়েছেন বোয়ালিয়া থানার তদন্ত ওসিকে।
ভাষাসৈনিকপুত্র সাইদুর রহমান বলেন, কেউ যদি মিথ্যা মামলা করে, তার বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় মামলা করার বিধান রয়েছে। যার কোনো নাম ঠিকানা নাই, অভিযোগ দিচ্ছে, মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে, একে ফাইন্ডাউট করবে কে? এ ধরণের অভিযোগ আমলে যারা নিচ্ছে, তাদের এগুলো যাচাই করা দরকার। রিসেন্ট এসব ঘটনা ঘটছে।
ভিন্ন প্রসঙ্গে রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি বলেন, আরেকটা ঘটনা, বরেন্দ্র উন্নয়ন কতৃৃপক্ষের ৩৫ জনকে নাকি বদলি করা হবে। এক ক্লার্ক ফোন করে বলছে, আপনারা যদি ঠেকাতে চান, তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করেন। আমাদের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী স্যারকে টাকা দিতে হবে, এখনই তার বিকাশে টাকা পাঠান ৬০ হাজার টাকা। দরদাম করতে করতে সেটা আসছে ৩০ হাজার ৪০ হাজার টাকায়। এই অডিও ফাঁস হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
গ্রামীন পরিবেশের অবস্থা তুলে ধরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির অন্যতম সদস্য সাংবাদিক সাইদুর রহমান বলেন, গ্রামগঞ্জে পুকুর খনন হচ্ছে, কৃষি জমি নষ্ট করে। এটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। পুকুর ভরাট বলেন, পুকুর খনন বলেন একটা ফি নির্ধারণ করে দিতে হবে, যেটা দিতে হবে। এসব করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ আগুন লেগে গেলে রাজশাহী শহরে, নিউ ডিগ্রি কলেজের কাছের পুকুর একরাত্রে ভরাট করে ফেলেছে। অদ্ভূত সব কাজ কারবার। রাজশাহী শহর কিন্তু এখন আর বসবাসের উপযোগী নাই, ঢাকার চেয়ে খারাপ হয়ে গেছে।
সভায় নগরীর যানজট সমস্যার কথাও তুলে ধরেন সাংবাদিক সাইদুর রহমান বলেন, সাহেব বাজার থেকে কোর্টে আসতে আগে সময় লাগত ৫ মিনিট, এখন লাগছে দেড় ঘন্টা। আপনারা রুট নির্ধারণ করেন। যেমন নওগাঁ রুটে নওগাঁর বাস চলবে, চাঁপাই রুটে চাঁপাইয়ের বাস চলবে, বগুড়া রুটে বগুড়ার বাস চলবে। ঠিক এখানেও একটা নিয়ম করেন। তাছাড়া এখানে আর এখানে বাস করা যাবে না।
নগরীর ব্যস্ততম রেলগেট এলাকায় জনভোগান্তি নিয়েও কথা বলেন দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের এ সন্তান। তিনি বলেন, মানুষ বলছে, এ শহরের কোনো মা বাপ নাই। কেন? রেলগেটে রাস্তা পড়ে আছে একবছর ধরে। জনগণকে এভাবে হয়রানি করার কোনো যুক্তি থাকে না।
সবশেষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে দাঁয়িত্ব পালন করলে আইনশৃঙ্খলা ভালো থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন দেশের দ্বিতীয় প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদুর রহমান।