
লালমনিরহাট প্রতিনিধি: জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই নিজস্ব অর্থায়নে ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’র কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।
এ দাবিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা নদীর উভয় তীরে একযোগে মশাল প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করেন তারা।
‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’-এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলা—লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার তিস্তাপাড়ের কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা মশাল হাতে একযোগে স্লোগান দেন— ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’।
তিস্তাপাড়ের মানুষেরা জানান, উত্তরের পাঁচ জেলার প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল।
তাদের অভিযোগ, বর্ষাকালে ঘন ঘন বন্যা, পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ নদীভাঙন, আর শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকটে ফসল উৎপাদনে বাধা—এই তিন দুর্যোগই এখন তিস্তাপাড়ের মানুষের নিত্যদিনের বাস্তবতা।
তারা জানান, বছরের পর বছর ধরে তিস্তা মহাপরিকল্পনার আশ্বাস শুনছেন, কিন্তু কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখেননি।
এ বছরের নভেম্বর মাসেই নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ শুরু না হলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
তিস্তা নদীর ন্যায্য পানিবণ্টন ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে চলতি বছরে একাধিক কর্মসূচি পালন করেছে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’।
গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তার দুই তীরে পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে একযোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন লাখো মানুষ। ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হয়। ৯ অক্টোবর উপজেলা শহরগুলোতে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তাপাড়ে গণশুনানিতে অংশ নিয়ে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরুর প্রতিশ্রুতি দেন। পরে তিনি জানান, ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’র কাজ শুরু হবে।
১০ বছরের মেয়াদে দুই ধাপে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রথম ধাপে ৫ বছরে ৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে—যার মধ্যে চীন থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৬ হাজার ৭০০ কোটি এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘সরকার যদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু না করে, তবে তিস্তাপাড়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার তো ইতিমধ্যে প্রথম ধাপের জন্য ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এখন সময় এসেছে কথা নয়, কাজ শুরুর।’