যায়যায়কাল প্রতিবেদক : আগামী বছর পবিত্র হজে যাওয়ার খরচসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এবার সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজের আওতায় হজে যাওয়ার খরচ এক লাখ টাকার বেশি কমছে।
পবিত্র হজসংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভা শেষে বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করে ‘হজ প্যাকেজ-২০২৫’ ঘোষণা করেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ পালিত হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে পবিত্র হজে যেতে পারবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার জনকে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। বাকিরা যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার জন্য দুটি প্যাকেজ রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-১-এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা, যা চলতি বছরের চেয়ে ১ লাখ ৯ হাজার ১৪৫ টাকা কম। আর প্যাকেজ ২-এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা, যা চলতি বছরের চেয়ে ১১ হাজার ৭০৭ টাকা কম।
অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজে এবার খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা, যা চলতি বছরের চেয়ে ১ লাখ ৬ হাজার ৬৪৪ টাকা কম।
সাধারণ হজ প্যাকেজ গ্রহণ করে এজেন্সিগুলো একটি অতিরিক্ত ‘বিশেষ প্যাকেজ’ ঘোষণা করতে পারবে।
হজ প্যাকেজগুলো করা হয় সুযোগ-সুবিধার ওপর ভিত্তি করে।
এবার পবিত্রে হজে যাওয়ার খরচ কমার পেছনে একাধিক কারণের কথা জানান ধর্ম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এবার বিমান ভাড়া প্রায় ২৭ হাজার টাকা কমানো হয়েছে।
আরেকটি কারণ হিসেবে তিনি জানান, পবিত্র মক্কায় হারাম শরিফের বহির্চত্বর থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে খরচ বেশি পড়ে। এবার মক্কায় হারাম শরিফের বহির্চত্বর থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কোন প্যাকেজে কী সুবিধা: সংবাদ সম্মেলনে কোন প্যাকেজে কী কী সুবিধা বা বৈশিষ্ট্য থাকবে, তা–ও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ-১-এর বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পবিত্র মক্কায় হারাম শরিফের বহির্চত্বর থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন ও যাতায়াতে বাসের ব্যবস্থা। পবিত্র মদিনায় মসজিদে নববি থেকে সর্বোচ্চ দেড় কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন।
মিনায় গ্রিন জোনে (জোন-৫) তাঁবুর অবস্থান। মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস সুবিধা। মক্কার হোটেল বা বাড়ি থেকে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা ট্রেনযোগে যাতায়াতের ব্যবস্থা। মিনা ও আরাফায় মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার পরিবেশন। অ্যাটাচ বাথসহ মক্কা ও মদিনায় বাড়ি বা হোটেলের প্রতি কক্ষে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসন। বাড়ি বা হোটেল কক্ষে রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থা। মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা। ৪৬ জন হজযাত্রীর জন্য ১ জন হজ গাইডের ব্যবস্থা। প্রত্যেক হজযাত্রীকে খাবার বাবদ ন্যূনতম ৪০ হাজার টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল এবং দমে শোকর (কোরবানি) বাবদ ৭৫০ সৌদি রিয়াল আবশ্যিকভাবে সঙ্গে নিতে হবে।
সরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ-২-এর মধ্যে মক্কায় হারাম শরিফের বহির্চত্বর থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। এই প্যাকেজে মোট খরচও বেশি।
অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজ অনুযায়ী হজযাত্রীদের জন্য মক্কায় হারাম শরিফের বহির্চত্বর থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। এ রকমভাবে অন্যান্য সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এই প্যাকেজ।
সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা জানান, এবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের টাকায় হজে পাঠানোকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, অতিথি হিসেবে পাঠানো হবে না। তবে হজ ব্যবস্থাপনার কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা যেতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার জানান, পবিত্র হজে যাওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত প্রাক্নিবন্ধন করেছেন ৭৫ হাজার ৫৩৩ জন। আর নিবন্ধন করেছেন ৯ হাজার ২৬৯ জন। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে।