বুধবার, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৬ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

, এর সর্বশেষ সংবাদ

হত্যাসহ ৩৩ মামলার আসামি ছিলেন জাকির খান

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: হত্যাসহ ৩২ মামলা থেকে খালাস পেয়ে কারামুক্ত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।

তাকে অভ্যর্থনা জানাতে সকাল ৭টা থেকে কারা ফটকের সামনে ফুলের মালা ও গাড়িবহর নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা।

কারামুক্ত হয়ে জাকির খান তাদের নিয়ে শহরে শোডাউন করেন। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়কসহ আশেপাশের সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়।

জাকিরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাজীব মণ্ডল রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাকির খানের বিরুদ্ধে থাকা ৩৩ মামলার ৩২টিতে খালাস পেয়েছেন। ১৯৯৪ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় তার ১৪ বছর সাজা হয়। উচ্চ আদালতে আপিলে এ সাজা কমে ৮ বছর হয়, পরে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদনে সাজা আরও ৩ বছর কমে। এ মামলাটির সাজার মেয়াদ শেষে তিনি কারামুক্ত হয়েছেন।’

দীর্ঘসময় পলাতক থাকার পর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-১১ এর অভিযানে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন জাকির খান। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদক আইনে ৩৩টি মামলা ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশ কয়েকটি মামলায় জামিন ও খালাস পান জাকির খান।

সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ২২ বছর পর নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ব্যবসায়ী নেতা ছাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার রায়ে জাকিরসহ সব আসামিকে খালাসের আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মমিনুল ইসলাম।

মামলায় খালাস পাওয়া বাকি আসামিরা হলেন- জাকির খানের দুই ছোট ভাই জিকু খান ও মামুন খান, তার সহযোগী জঙ্গল ওরফে লিটন, মোক্তার হোসেন, মনিরুজ্জামান শাহীন, নাজির আহমেদ ও আব্দুল আজিজ।

২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর মাসদাইর এলাকায় নিজের বাড়ির অদূরে ছাব্বির আলম খন্দকারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিট পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি ছাব্বির বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা (বহিষ্কৃত) ও বর্তমানে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই।

নব্বইয়ের দশকে জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে আসা জাকির হোসেন ওরফে জাকির খান একসময় শহরের ‘ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হন। ছাব্বির আলম খন্দকার হত্যার পর আসামি হিসেবে নাম এলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

সাব্বির হত্যা মামলার পর জাকির থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। পলাতক থাকা অবস্থাতেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় আদালত সাজা প্রদান করে। এরপর থেকে তিনি আর দেশে ফেরেননি। এক বছর আগে ভারত হয়ে দেশে ফিরে আসেন।নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে শহরের ত্রাস হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির খান।

জাকির খানের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালে সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন বিশেষ আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় তার ১৭ বছরের সাজা হয়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে তার সাজা কমে আট বছর হলেও তিনি গ্রেফতার এড়াতে দেশে ও বিদেশে প্রায় দুই দশক পলাতক ছিলেন।

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে জাতীয় পার্টির প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের হাত ধরে জাকির জাতীয় ছাত্র সমাজে যোগ দেন। ওই নেতার সঙ্গে বিরোধের জেরে ১৯৯৪ সালে তিনি ছাত্রদলে যোগ দেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হন। তখন শহরের ডিআইটিতে তাকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে কয়েক দফা জেলও খাটেন তিনি। দেশে না থাকলেও অনুসারীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল জাকির খানের।

গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে শহরের পরিবহন, ঝুটসহ বিভিন্ন সেক্টরে জাকির খানের অনুসারীদের দখল ও আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ ওঠে। গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি পরিবহন দখলকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জাকির খানের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির আরেকটি পক্ষের সংঘর্ষ হয়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *