যায়যায়কাল ডেস্ক: বিশিষ্ট লেখক ও বিশ্লেষক ডক্টর আলী আহমাদের মতে ইতিহাসে দেখা গেছে প্রতিরোধ অক্ষ ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতের প্রথম সপ্তাহগুলোর মধ্যে আঘাতের ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে সব সময়ই।
হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের পরও এই আন্দোলন ইহুদিবাদ-বিরোধী সংগ্রাম জোরালোভাবে অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে বলে তিনি ও অন্য অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন।
হিজবুল্লাহর সঙ্গে অসাধারণ সংহতি
কৌশলগত বিষয়ে বিশিষ্ট লেবাননি বিশ্লেষক ও লেবানন সরকার ও জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ক মুনির শিহাদার মতে লেবাননে বেতার যন্ত্রগুলোতে সাইবার হামলার মাধ্যমে বিস্ফোরণ ও হিজবুল্লাহর মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন এর বেশ কয়েকজন কমান্ডারের শাহাদাত প্রতিরোধ আন্দোলনের তৎপরতা ও সামর্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারত। কিন্তু প্রতিরোধ যোদ্ধারা হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা ও কমান্ডারদের সঙ্গে অসাধারণ সংহতি প্রকাশ করে ওইসব ইসরাইলি হামলার মাত্র এক ঘণ্টা পরই ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পুনরায় শুরু করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে খুব দ্রুত ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে ফিরে এসেছে হিজবুল্লাহ। শিহাদার মতে পরিস্থিতি জটিল হওয়া সত্ত্বেও অধিকৃত অঞ্চলে হামলা বন্ধ করবে না হিজবুল্লাহ।
ইহুদিবাদী শরণার্থী বা বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা আরও বাড়বে
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার যুদ্ধ না থামা পর্যন্ত হিজবুল্লাহ হামলা বন্ধ করবে না। ফলে হিজবুল্লাহর হামলার কারণে উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে যাওয়া ইসরাইলিদেরকে আবারও উত্তরাঞ্চলে ফিরিয়ে আনার যে স্বপ্ন দেখছে নেতানিয়াহু তা বাস্তবায়ন হবে না। কারণ হিজবুল্লাহ এখন তেলআবিবের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে ১২০ কিলোমিটার পাল্লার। তাই ফিলিস্তিনের উত্তরাঞ্চল ছাড়াও অবৈধ ইহুদিবাদী বসতিগুলোর অধিবাসীরাও এখন ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে। অর্থাৎ এক লাখ বিশ হাজার থেকে এক লাখ ত্রিশ হাজার বাস্তুচ্যুত ইহুদিবাদী দখলদারদেরকে তাদের অবৈধ বসতিগুলোতে ফেরত আনতে গিয়ে ইসরাইলকে হয়ত দশ লাখেরও বেশি ইহুদিবাদীর বাস্তুচ্যুত হওয়ার বিষয়ে ভাবতে হবে।
হিজবুল্লাহ প্রধানের শাহাদাতের পর আর কোনো সীমারেখা মানবে না এ আন্দোলন
শিহাদার মতে ইহুদিবাদী ইসরাইল হিজবুল্লাহর সব লাল-সীমারেখাগুলো লঙ্ঘন করায় এখন অনেক মুক্তভাবে আচরণ করবে হিজবুল্লাহ। ফলে হিজবুল্লাহর সেনারা এখন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা ব্যবহার শুরু করেছে।
স্থল-অভিযান হিজবুল্লাহর জন্য হবে তুরুপের তাস
মুনির শিহাদার মতে ইসরাইল লেবাননে স্থল-অভিযান শুরু করলে তা হবে হিজবুল্লাহর জন্য বড় ধরনের উপহার। কারণ একবার শূন্য দূরত্ব থেকে যুদ্ধ শুরু করলে একই অঞ্চলে বিমান হামলা বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে ইসরাইল। আর তখন স্থল-যুদ্ধে ব্যাপক পারদর্শী হিজবুল্লাহর সেনারা দক্ষিণ লেবাননের পরিচিত ও স্বাভাবিক পরিবেশে খুব ভালোভাবে যুদ্ধ করতে পারবে। অন্যদিকে ইহুদিবাদী সেনাদের জন্য দুর্গম এই পার্বত্য অঞ্চলে যুদ্ধ করা সহজ হবে না। এ অঞ্চল ১১৮ কিলোমিটার প্রশস্ত ও ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। অর্থাৎ এ অঞ্চল গাজার চেয়ে অনেক বেশি প্রশস্ত
দক্ষিণ লেবানন হবে ইসরাইলি ট্যাংকগুলোর গোরস্তান
হিজবুল্লাহর কাছে রয়েছে বিপুল সংখ্যক ট্যাংক-বিধ্বংসী গোলা এবং কর্নেট ও সারাল্লাহ ক্ষেপণাস্ত্র। এ অঞ্চলে হিজবুল্লাহর বিপুল সুড়ঙ্গ থাকায় স্থল যুদ্ধ শুরু হলে ইসরাইলি ট্যাংকগুলো এমনকি লেবাননের রণক্ষেত্রে প্রবেশের আগেই ধ্বংস হবে।
বিপর্যয়ের ধাক্কাগুলো সামলে ওঠার ক্ষমতা রয়েছে হিজবুল্লাহর
বিশিষ্ট লেখক ও বিশ্লেষক ডক্টর আলী আহমাদের মতে ইতিহাসে দেখা গেছে প্রতিরোধ অক্ষ ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতের প্রথম সপ্তাহগুলোর মধ্যে আঘাতের ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে সব সময়ই। ৩৩ দিনের যুদ্ধের সময়ও এ বিষয়টি দেখা গেছে। তাই হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের পরও এই আন্দোলন ইহুদিবাদ-বিরোধী সংগ্রাম জোরালোভাবে অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে।
সময়: হিজবুল্লাহর সাফল্যের কারণ
আলী আহমাদের মতে দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর উপস্থিতি বেশ শক্তিশালী এবং তারা শত্রুর ওপর ভয়ানক নানা আঘাত হানতে সক্ষম হবে। তাই গত বছর ইসরাইল যেমন গাজায় কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে এখানেও তারা সুনিশ্চিতভাবেই হিজবুল্লাহর দৃঢ়তা ও অধ্যবসায়ের মোকাবেলায় কোনো সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে না।