বৃহস্পতিবার, ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হিলিতে ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা

খাঁন মো. আঃ মজিদ, দিনাজপুর: কয়েক বছর রাজস্ব ঘাটতি কাটছে না দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে। এবারও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব ঘাটতিতে পড়েছে স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ স্থলবন্দর।

কম শুল্কযুক্ত ও শুল্কমুক্ত পণ্য বেশি আমদানি হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতিতে প্রভাব পড়েছে বলে দাবি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের, তবে কাস্টমসের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।

হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের তথ্যমতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআর হিলি স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে ৭৪০ কোটি টাকা। প্রথম আট মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৩৮ কোটি টাকা। ফলে ৪৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে বন্দরটি।

তথ্য মতে, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা; বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৫৫ কোটি আট লাখ টাকা; অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা; বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ কোটি ২১ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। জানুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৯ কোটি ৩১ লাখা টাকা এবং ফেব্রুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১ কোটি ৬১ লাখ টাকা যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭০ কোটি ২ লাখ টাকা। কয়েক বছর রাজস্ব ঘাটতি কাটছে না দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে। এবারও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব ঘাটতিতে পড়েছে স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ

বন্দরের আমদানিকারক নুর ইসলাম বলেন, ‘রাজস্ব ঘাটতির মূল কারণ এই বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয়, যেমন চাল-ডাল, খৈল, ভুসি, ভুট্টা ও পেঁয়াজসহ অধিকাংশই শুল্কমুক্ত। এখন সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় চাল। এতে যে শুল্ক ছিল সরকার সেটি প্রত্যাহার করেছে। এ কারণে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। আরেকটি কারণ হলো আগে প্রচুর পরিমাণ ফল আমদানি হতো। কিন্তু সরকার ট্রাকের চাকা অনুযায়ী শুল্কায়নের প্রথা চালু রাখায় ফল আমদানি বন্ধ আছে। এটি যদি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় অর্থাৎ যে যতটুকু পণ্য আমদানি করবে, সেই পরিমাণ পণ্যের শুল্ক দেবে, তাহলে প্রচুর পরিমাণ ফল আমদানি হতো। সেইসঙ্গে রাজস্ব বাড়তো।

তিনি আরও বলেন, অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও এখানে বৈষম্য আছে। বেনাপোলে যে পণ্য সাড়ে তিন ডলারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে, একই পণ্য হিলি বন্দরে পাঁচ ডলারে শুল্কায়ন করা হয়। ফলে আমদানিকারকরা এই বন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব জটিলতা কাটলে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বাড়বে, সেইসঙ্গে রাজস্বও বাড়বে।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন বলেন, যেসব পণ্যের ওপরে রাজস্ব বেশি সেগুলো হিলি দিয়ে আমদানি হয় না। কারণ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এইচএস কোড ও শুল্ক নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে। ফলে ওসব পণ্য বেনাপোল দিয়ে আমদানি হয়। সরকারের রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা সেটিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আমরা চাই এসব জটিলতা দ্রুত কাটুক এবং হিলি কাস্টমসের রাজস্ব আয় আরো বাড়ুক।

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বলেন, এই শুল্ক স্টেশন দিয়ে কম শুল্কযুক্ত ও শুল্কমুক্ত পণ্য বেশি আমদানি হওয়ায় কারণে রাজস্ব আদায়ে কিছু ঘাটতি রয়েছে। তবে অর্থবছরের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব। কারণ গত ফেব্রুয়ারি মাসে লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি রাজস্ব এসেছে বেশি শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানির কারণে। বিশেষ করে জিরা, এলাচসহ মসলা পণ্যের আমদানি বাড়লে রাজস্ব ঘাটতি হবে না।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *