মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

২০২৪-২৫ অর্থবছরে কেরুতে বিশাল মুনাফার সম্ভবনা

মো. আব্দুল্লাহ হক, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় অবস্থিত শিল্প মন্ত্রণালয়ের একমাত্র লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ‘কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড’-এ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বিশাল মুনাফার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান (এফসিএমএ)।

এমডি রাব্বিক হাসান জানান, প্রতিষ্ঠানটি এ বছর সরকারি কোষাগারে ১৪১ কোটি টাকা রাজস্ব জমা দেওয়ার পাশাপাশি প্রায় ১২০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জনের পথে রয়েছে। কেরু’র ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ফলে দেশি মদ (কান্ট্রি স্পিরিট) বোতলজাত করতে সক্ষম হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ও লাভের বড় উৎস হিসেবে কাজ করছে।

কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মূল পণ্য চিনি হলেও, আখ থেকে চিনি নিষ্কাশনের পর উৎপন্ন বাইপ্রোডাক্ট—মোলাসেস থেকে তৈরি করা হয় ভিনেগার, দেশি ও বিদেশি মদ এবং জৈব সার।

কেরু’র কমপ্লেক্সে রয়েছে চারটি ইউনিট—চিনি কারখানা, ডিস্টিলারি, বাণিজ্যিক খামার এবং জৈব সার কারখানা। আখের সরবরাহ কম থাকায় চিনিশিল্প বিভাগ কিছুটা লোকসানে থাকলেও, অন্যান্য ইউনিট বিগত ১৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে লাভ করছে।

ডিস্টিলারি ইউনিটে তৈরি হচ্ছে ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, রোসা রাম, ওল্ড রাম ও জারিনা ভদকা। বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা প্রচুর, যা প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

২০২৪–২৫ অর্থবছরে চিনি ও ভিনেগার উৎপাদন এবং রিকভারি বাড়ার পাশাপাশি ডিস্টিলারিতে উৎপাদন বেড়েছে। আখচাষেও দেখা গেছে ইতিবাচক প্রবণতা।

গত ২২ মে প্রথমবারের মতো কান্ট্রি স্পিরিট বোতলজাত করে বাজারজাত শুরু করে কেরু। কিন্তু এ উদ্যোগকে কেন্দ্র করে একটি চক্র এমডি রাব্বিক হাসানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে শুরু করে। যদিও শিল্প উপদেষ্টা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদনে বটলিং কার্যক্রম চালু হয়, তবে পরিবেশ অধিদপ্তর প্লাস্টিক বোতল ব্যবহারে আপত্তি জানায়। তবুও কেরু প্রশাসন সিদ্ধান্তে অটল থেকে সকল চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে বোতলজাত পণ্য সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান (এফসিএমএ) জানান, “ভালো কিছু করতে গেলে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। আমি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। প্রতিষ্ঠান ও দেশের স্বার্থেই কাজ করছি। সবার সহযোগিতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কামনা করি।”

তিনি আরও জানান, ছুটির দিনেও তিনি আখচাষিদের সঙ্গে সরাসরি মাঠে গিয়ে সাক্ষাৎ করছেন, যা ব্যবস্থাপনার আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতার প্রকাশ।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব) রশিদুল হাসান, ( যিনি বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন), তিনি বলেন, “কেরু অ্যান্ড কোম্পানি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানি না। দায়িত্ব বুঝে নিয়ে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে পরে মন্তব্য করব।”

দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প খাতে একটি উদাহরণ হয়ে উঠছে। প্রতিষ্ঠানটির সফলতা অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানকে অনুপ্রাণিত করবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ