
যায়যায়কাল প্রতিবেদক: প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) টানাপড়েনের মধ্যে প্রতীকের তালিকায় ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানিয়েছে ইসি।
এতে ১১৯টি নির্বাচনী প্রতীকের তালিকা দিয়ে বলা হয়, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে স্থগিতকৃত প্রতীক ছাড়া অন্যান্য প্রতীকের মধ্যে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা যাবে।
তালিকায় ‘নৌকা’ প্রতীককে স্থগিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ১১৫টি প্রতীকের তালিকা দিয়ে প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল ইসি।
উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ চেয়ে দাবি জানিয়ে আসছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
গত ২২ জুন এনসিপি তাদের নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেয় এবং তিনটি প্রতীক প্রস্তাব করে— শাপলা, কলম ও মোবাইল ফোন।
পরে ৩ আগস্ট ও ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে তারা তাদের পছন্দ সংশোধন করে জানায়, তারা সাদা বা লাল শাপলা চায়।
৩০ সেপ্টেম্বর ইসি দলটিকে চিঠি দিয়ে জানায়, অনুমোদিত প্রতীকের তালিকা থেকে একটি প্রতীক বেছে নিয়ে ৭ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতে হবে।
পরে আরেক চিঠিতে বলা হয়, ১৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রতীক নির্বাচন করতে হবে। ওই দিন এনসিপি ইসির কাছে লিখিতভাবে জানতে চায়, কোন মানদণ্ডে প্রতীক তালিকায় রাখা হয় বা বাদ দেওয়া হয়।
এর আগে ৯ জুলাই ইসি সিদ্ধান্ত নেয়, নির্বাচন পরিচালনা বিধি অনুযায়ী শাপলা প্রতীক তালিকায় রাখা হবে না।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে ঠিক করেছি, শাপলা প্রতীক হিসেবে রাখা হবে না। কারণ এটি জাতীয় প্রতীকের অংশ।’
২৩ সেপ্টেম্বর কমিশন নির্বাচনী প্রতীকের সংখ্যা ৬৯ থেকে বাড়িয়ে ১১৫ করে, তবে শাপলা বাদ রাখে। এর মধ্যে ৫১টি নিবন্ধিত দলকে দেওয়া হয়, বাকিগুলো স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভবিষ্যৎ ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর এনসিপি চিঠি দিয়ে জানায়, কমিশনের যুক্তি ‘আইনগতভাবে সঠিক নয়’। তাদের মতে, কমিশনের প্রত্যাখ্যানের কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
চিঠিতে এনসিপি উল্লেখ করে, জাতীয় প্রতীকে শাপলা ভাসছে পানির ওপর, এর রং হলুদ ও লালচে।
দলটি আরও বলে, জাতীয় প্রতীকে চারটি ভিন্ন উপাদান রয়েছে। ইসি ইতোমধ্যে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দিয়েছে বিএনপিকে এবং ‘তারা’ দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ-রব)। যেহেতু এমন নজির আছে, ইসি শাপলাকেও তালিকাভুক্ত করে দিতে পারে।
ইসি ইতিমধ্যে জাতীয় ফল ‘কাঁঠাল’ দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির একাংশকে এবং ‘সোনালি আঁশ (পাট)’ দিয়েছে তৃণমূল বিএনপিকে।
এনসিপির যুক্তি, ‘তাহলে শাপলা জাতীয় ফুল হলেও এটি প্রতীক হিসেবে রাখায় কোনো আইনগত বাধা নেই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচন কমিশনের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির ধানের শীষ ও জাতীয় প্রতীকের ধান এক নয়। জাতীয় প্রতীকে দুইদিকে একক শীষ, আর বিএনপির প্রতীকে গোছা আকারে ধান রয়েছে। তাদের মধ্যে দৃশ্যগত পার্থক্য আছে।
২৪ সেপ্টেম্বরের চিঠির পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন প্রশ্ন তোলেন, ‘নাগরিক ঐক্যের আবেদন যখন কোনো বিতর্ক ছাড়াই খারিজ হয়েছিল, তখন এনসিপির আবেদনে এত বিতর্ক কেন?’
তিনি বলেন, এনসিপি যদি নির্বাচন পরিচালনা বিধি সংশোধন করে শাপলা প্রতীক পেতে চায়, বিষয়টি কমিশন বিষয়টি সম্মিলিতভাবে বিবেচনা করবে।
গত ৯ অক্টোবর এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের পছন্দের প্রতীক না পেলে আমরা নিবন্ধন নেব না। এখন ইসির সামনে দুটি বিকল্প— হয় ধান, তারা ও সোনালি আঁশ প্রতীকগুলো বাতিল করুক, নয়তো শাপলা দিক। আমরা কারও প্রতীক বাতিল চাই না।’
নাম জানাতে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২০০১ সালের আগ পর্যন্ত সাধারণত ইসি নির্বাচনের আগে প্রতীক বণ্টনের দিন দলগুলোর সঙ্গে বসত। তখন আগের নির্বাচনে ব্যবহৃত প্রতীকই দলগুলোকে দেওয়া হতো।’
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ইসি দল নিবন্ধনের ব্যবস্থা চালু করে এবং নির্বাচন পরিচালনা বিধি-২০০৮ অনুযায়ী নিবন্ধিত প্রতিটি দলকে নির্দিষ্ট প্রতীক দেয়। অন্য প্রতীকগুলো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
তিনি আরও জানান, বিএনপি প্রথম ‘ধানের শীষ’ প্রতীক ব্যবহার করে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময়ও এটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রতীক হয়। তার প্রশ্ন— এত পুরনো বিষয়ে এখন প্রশ্ন তোলার মানে কী?
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘শাপলা নিয়ে বিষয়টি নতুন করে উঠেছে, তাই কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। শাপলাই জাতীয় প্রতীকের মূল উপাদান। বাকি অংশগুলো সাজসজ্জার জন্য। প্রতীকের ভিত্তি হচ্ছে শাপলা।’












