মঙ্গলবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

রংপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আফতাব হোসেন চলে গেলেন না ফেরার দেশে

রংপুর প্রতিনিধি: রংপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, লেখক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আফতাব হোসেন চলে গেছেন না ফেরার দেশে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তিনি এক ছেলে, স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) ভোর সোয়া ৬টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে ভুগছিলেন।

এর আগে সোমবার বিকেলে রংপুর শহরের কামাল কাছনার বাসায় হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক আফতাব হোসেনের জানাজার নামাজ আজ বাদ আছর পীরগাছা উপজেলার নবদীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন ঈদগাহে মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এরআগে তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন সংগঠন।

আফতাব হোসেন বৈশাখী টেলিভিশনে সাংবাদিকতার পাশাপাশি বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রে নিয়মিত সংবাদ পাঠ করতেন। তিনি সাড়ে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিলেন। সেই সূত্রে সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন বন্ধন ছিল। দীর্ঘ সাংবাদিকতার এ যাত্রায় তিনি গণমাধ্যমে উত্তরের সম্ভাবনাময় কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।

আফতাব হোসেন এর আগে রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক দাবানল ও দৈনিক যুগের আলো পত্রিকায় দীর্ঘদিন বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন রংপুর প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ও রংপুর সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর রংপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া তিনি বিভাগীয় লেখক পরিষদ, রংপুর ও ফিরে দেখা সংগঠনের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

আফতাব হোসেন সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও পেশাগত কারণে স্বাধীনতা পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনুসন্ধান ও গবেষণা বিষয়ে বিশেষ অবদান রেখেছেন। এজন্য রয়েছে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি। তিনি বাংলাদেশ বেতার সম্মাননা, মোনাজাত উদ্দিন স্মৃতি পদক, নাগরিক, মানব কল্যাণ পদকসহ সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ে একাধিক সম্মাননা পদক পেয়েছেন। এছাড়াও ২০১৭ সালে সাংবাদিকতা বিষয়ে গ্রন্থ লিখে পেয়েছেন বর্ষসেরা পাণ্ডুলিপি পুরস্কার।

প্রান্তিক জনপদের সংবাদ তুলে আনা গুণী এ সাংবাদিক শুধু খবর পরিবেশন করতেন না, তিনি একাধারে সংবাদপত্র, বেতার ও টেলিভিশনের ভালো উপস্থাপক হিসেবেও সমাদৃত ছিলেন। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখেছেন ‘সাংবাদিকতার পথে পথে’। এছাড়া তার লেখা দুটি বই হলো মুক্তিযুদ্ধের গল্প ও রোকেয়া পঞ্চানন দুই বাংলার সেতুবন্ধন।

মৃত্যুর আগে তিনি রংপুরের আর্থ-সামাজিক বিবর্তন নিয়ে আরেকটি প্রকাশনা বের করতে পাণ্ডুলিপি লেখা অব্যাহত রেখেছিলেন। আফতাব হোসেনের আগের লেখা বইগুলো আইডিয়া প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

আফতাব হোসেনের মৃত্যুতে রংপুরের সাংবাদিক মহল ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গণে শোকের ছায়া নেমেছে। রংপুর প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুর, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, সিটি প্রেসক্লাব, মাহিগঞ্জ প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-টিসিএসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য ও পেশাজীবী সংগঠন থেকেও শোক জানিয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ