
খন্দকার শাহ নেওয়াজ, রায়পুরা: শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবন-মানের এই পরিবর্তন শুরু হয়েছে রায়পুরা।
জানা যায়, “দেশের একটি পরিবারও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রতি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় নরসিংদী জেলার রায়পুরায় পেয়েছেন দুই শতাংশ জমি ও একটি সেমিপাকা ঘর। সেই সাথে পাচ্ছেন বিদ্যুৎ সংযোগ, সুপিয় পানির ব্যবস্থাসহ সকল ধরনের নাগরিক সুবিদা পাচ্ছেন। নরসিংদী জেলায় ইতিমধ্যে ৭শ ২টি পরিবার আশ্রয়ণে বসবাস করছেন এবং ৪শ ৫৯টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। তন্মধ্যে রায়পুরায় ৭৫ টির নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। আসছে মার্চ মাসের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ করে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্ধি ও হাইরমারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেখা গেছে, সময়ের সাথে এখন বদলেছে ছিন্নমূল মানুষের জীবনমান। সেই বাড়িতেই করছেন শাক-সবজির আবাদ। কেউবা করছে হাঁস মুরগি-ছাগল-গরু পালন। সন্তানদের পাঠাচ্ছেন স্কুলে। বসতির দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছে সংসার। সংসারে এসেছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। বসবাসের জন্য সরকারের দেওয়া এই সুবিধাটি পেয়ে মহাখুশি আশ্রয়হীন মানুষগুলো।
রায়পুরায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা ইতোমধ্যে গঠন করেছে অন্তত ৪টি সমবায় সমিতি। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ড্রাইভিং, কৃষি, মৎস্য, সেলাই কাজ সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষন নিচ্ছে তারা। অনেকের একাডেমিক শিক্ষা না থাকলেও নানা প্রশিক্ষণে হয়ে উঠছেন স্বশিক্ষিত। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত তদারকিতে ক্রমেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের নানা দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া রায়পুরা উপজেলার আশ্রয়ণের বাসিন্দা শাজাহান মিয়া, লাল মিয়া, লাকী বেগমসহ আরো অনেকেই জানান, ‘কিছু দিন আগেও ভাবিনি নিজের ভালো একটা ঠিকানা হবে। এখন সেটি হয়েছে, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছি। নিজের হাঁস-মুরগি পালনসহ নানা কাজ করার সুযোগ পেয়েছি- সত্যিই এটা স্বপ্নের। এমনটি হবে ভাবিনি, সৃষ্টিকর্তার কাছে হাসিনার জন্য দোয়া করি।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় জেলায় হতদরিদ্র যাদের বসবাসের কোন ঠিকানা ছিল না, তাদের স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এটা সত্যিই বিস্ময়কর। ওই মানুষগুলো তাদের ভাগ্যে চাকা নতুনভাবে ঘুরাতে শুরু করেছে।
রায়পুরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজগর হোসেন জানান, আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা তাদের জীবন মান উন্নয়নে নিজেরাই এগিয়ে এসেছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করছি। চরসুবুদ্ধি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ইতিমধ্যে ২০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করেছি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন আশ্রয়ণ কেন্দ্রের মধ্য থেকে ৮০জন কে ড্রাইভিং, কৃষি, মৎস্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষনের আওতায় নিয়ে এসেছি। তারা এখন অনেক ভালো আছে। এই প্রকল্প বিশে^ একটি রোল মডেল। কারণ এভাবে কোন দেশে আশ্রয়হীনদের জন্য সরকারিভাবে নিরাপদ ছাদ তৈরি করা হয়নি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ মাসুম বলেন, নরসিংদী জেলায় ১হাজার ১শ ৬১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। প্রথম থেকে ৩য় পর্যায়ে ৭শ ২টি পরিবারকে জমিসহ সেমিপাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। আরো ৪শ ৫৯টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। নির্মাণকাজ শেষে আসছে ৩১মার্চ হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।