মো. মনজুরুল ইসলাম (মনজু) নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে জাতির পিতার ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ সোমবার (১৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫ টায় সংসদ ভবনের সম্মুখে মানিক মিঞা এভিনিউ পূর্বপ্রান্তে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের সন্নিকটে টিএন্ডটি মাঠের সামনের যাত্রী ছাউনি থেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ৪৮টি মশাল নিয়ে ‘আলোর মিছিলের’ যাত্রা শুরু করে।
আলোর মিছিলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলাসহ অনেক আলোচিত মামলার অন্যতম তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাহার আকন্দ। গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. শাহাদাত হোসেন ও পিরোজপুর বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. কাজী সাইফুদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আবদুল কাহার আকন্দ বলেন, ‘আমরা এই দেশকে কখনোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের হতে যেতে দিতে পারি না। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের চেষ্টা করছে। ৭৫’র পর ২১ বছর এই চেষ্টা চলেছে। কিন্তু প্রতিবারই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা তা প্রতিহত করেছে।’ তিনি বলেন, আজ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের হাতে আলো জ্বলবে। এর মাধ্যমে দেশ থেকে অন্যায়, অবিচার, অনাচার, সাম্প্রদায়িকতা দূর হবে। তৈরি হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ। বিএনপিকে উদ্দেশ করে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে প্রমাণ করতে চায়। তারা আরেকটি ১৫ আগস্ট সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু এদেশে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের প্রজন্মরা বেঁচে থাকতে তাদের এই আশা কোনো দিন পূরণ হবে না।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিলো, কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন করার, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের এবং রেডিও, টেলিভিশনসহ সব ক্ষেত্রে পাকিস্তানি ভাবধারা ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা হয়েছিলো। তারপরের ২০ বছরের অচলাবস্থা ভেঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে আবার সরকার গঠন করার মধ্যদিয়ে এবং ২০০৮ সালে সরকার গঠন করার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে সাড়ে ১৪ বছরে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তার ফলে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর সামনে একটি গর্বিত রাষ্ট্র।’
মিছিলের আগে আয়োজিত পথসভায় সভাপতিত্ব করেন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেন তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশে এখনো ষড়যন্ত্র করছে, এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশকে আলোর দিকে নিয়ে যেতে হবে’। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানান।
সভায় অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শহীদ সংসদ সদস্য নূরুল হক হাওলাদারের কন্যা জোবায়দা হক অজন্তা, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান শাহীন, সহ-সভাপতি ওমর ফারুক সাগর, আকবর হোসেন মিঠু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ রনি, আজহারুল ইসলাম অপু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আল ইমরান শিকদার, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আনিসুর রহমান মোল্লা, মাহমুদুল হাসান রুবেল, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল বাশার জুয়েল, ঢাকা বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন দ্রুব, সিলেট জেলা সভাপতি আতাউর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ সরকার, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান চৌধুরীর নাতি ফয়জুল হাসান চৌধুরী সামি।
স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশে এখনো ষড়যন্ত্র করছে, এই অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশকে আলোর দিকে নিয়ে যেতে হবে। ১৪ আগস্ট রাতে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ আয়োজিত আলোর মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন।
তারা আরও বলেন, জাতীয় কুলাঙ্গাররা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। জাহাঙ্গীর গেইট দিয়ে মানিক মিঞা এভিনিউ হয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে ঘাতকের ট্যাঙ্ক জাতির পিতাকে হত্যা করে বাঙালি জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে। যে পথে ঘাতকের ট্যাঙ্ক গিয়ে জাতির পিতাকে হত্যা করে জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে সে পথে আলো জ্বালায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।
সংগঠনের সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন মৃদুল সমাবেশে পরিচালনা করেন। তারা বলেন, বৈশ্বিক মন্দার এই সংকটকালে সুযোগ সন্ধানী ও দেশ বিরোধীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পায়তারা করছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মুক্তিযোদ্ধা জনতার ঐক্যবদ্ধ শক্তি সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন তারা।
আরোও বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং দেশদ্রোহী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনতার নেতৃত্ব দিতে হবে। যে পথে ঘাতকের ট্যাঙ্ক ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে সেপথে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা প্রতিবছর প্রজ্জ্বলিত মশাল হাতে নিয়ে আলোর মিছিল করে। দেশকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় নিয়ে ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর তারা এ কর্মসূচি পালন করে।
জাতির পিতার ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এবার তারা ৪৮টি মশাল নিয়ে এই আলোর মিছিল করে। মিছিলটি রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ’র টিএন্ডটি মাঠ থেকে শুরু হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতির সামনে শপথ গ্রহণ ও ১৫ আগস্টে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হয়।