
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে সড়কের অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র হলেও দিন দিন দুর্ঘটনার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। হতাহতের ঘটনা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনোভাবেইে এটাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রয়োজন বলে জানান রোড সেইফটি কোয়ালিশন।
আজ ২৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সড়ক দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা আইন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এই কোয়ালিশন।
নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, রোড সেইফটি কোয়ালিশনের সদস্য সংস্থা নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
ইলিয়াস কাঞ্চন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে রোডক্র্যাশে প্রতি বছর প্রাণহানি হয় আনুমানিক ২৫ হাজার মানুষের। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরেও রোডক্র্যাশের সার্বিক হার কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। অথচ এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা কতটা আন্তরিক তা প্রশ্ন থেকে যায়।
তিনি আরও বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য উন্নত দেশগুলো সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের (মাল্টিমডাল ট্রান্সপোর্টেশন, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী ও রোডক্রাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা) আলোকে নিজেদের আইনি ও নীতি কাঠামো প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নে সুফল পেয়েছে। সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, মানুষ বা সড়ক ব্যবহারকারী ভুল করলেও সড়ক ব্যবস্থাপনা এমন হবে, যার ফলে মানুষকে তার ভুলের সর্বোচ্চ মাসুল অর্থাৎ মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের শিকার যেন হতে না হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের বর্তমান আইনি ও নীতি কাঠামোতে এই দর্শন সম্পূর্ণরূপে অনুপুস্থিত। তবে আশার কথা হলো, বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় গৃহীত বাংলাদেশ রোড সেইফটি প্রকল্পে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের কিছু ব্যবহার শুরু হয়েছে। আমরা এই বিজ্ঞানভিত্তিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি, সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে নিরাপদ সড়কের জন্য আলাদা আইনি কাঠামোর জোর দাবি জানাই, যাতে সড়কে মানুষের জীবনের মৃত্যু ঝুঁকি কমে এবং জীবন হয় নিরাপদ।
তিনি আরোও বলেন, আমাদের বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত সড়কে পরিবহনের জন্য আইন এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধিমালা। তাই পরিবহন ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি এই আইনে সাম্প্রতিক সংশোধনীর সময়ে গতি নিয়ন্ত্রণ, হেলমেট ও সিটবেল্ট ব্যবহারের মতো কিছু বিষয় সংযোজন করা হলেও তা সড়কে রোডক্র্যাশের কারণে মানুষের মৃত্যু ও বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষার করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। সুতরাং সড়কে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে নিরাপদ সড়ক সংক্রান্ত আলাদা আইন প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন আরোও বলেন, প্রায় প্রতিদিনই পথচারীরা রোডক্র্যাশের শিকার হচ্ছেন। ঘটছে নির্দয় ও নিষ্ঠুর অনেক ঘটনা। এতে প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ পথচারী, যানবাহনের যাত্রী এবং কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ। পরিবহনের পাশাপাশি পথচারী পারাপার ও তাদের নিরাপদে চলাচল সড়ক নিরাপত্তার অন্যতম একটি অংশ। যা আমাদের বর্তমান আইন বা নীতিকাঠামোতে উদ্বেগজনকভাবে অনুপস্থিত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ-এর সদস্য সংস্থা ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম খালিদ মাহমুদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক (রোড সেফটি) ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁঞা, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (বিএনএনআরসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান, সিআইপিআরবির পরিচালক ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের হেলথ সেক্টরের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান, ইমপ্রেসিভ কমিউনিকেশন লিমিটেডের (আইসিএল) ম্যানেজিং ডিরেক্টর খন্দকার হাসিবুজ্জামান, এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর সহযোগী অধ্যাপক ড. সোহেল মাহমুদ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক বজলুর রহমান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের সিফাত ই রাব্বানী এবং স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের চন্দন লাহিড়ীসহ কোয়ালিশনের অন্যান্য নেতারা।