নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ ৯০ হাজার, যারা টানা সাত দিনের মধ্যে এক ঘণ্টাও কাজ পাননি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪) শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য নিয়ে সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। বেকারদের মধ্যে পুরুষ ১৭ লাখ ৪০ হাজার ও নারী ৮ লাখ ৫০ হাজার।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের একই সময়েও বেকার ছিলেন ২৫ লাখ ৯০ হাজার জন। সে তুলনায় গত এক বছরে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি। তবে এই ১২ মাসের চার প্রান্তিকে সংখ্যাটি ওঠানামা করেছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ দিকে বেকারদের মধ্যে অনেকেই কাজ পাওয়ায় গত ডিসেম্বর শেষে বেকারের সংখ্যা চলতি বছরের মার্চের তুলনায় আরও কম ছিল।
প্রতিবেদন বলা হয়েছে, তিন মাস আগে গত ডিসেম্বরে দেশে বেকার ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার। গত তিন মাসে এক লাখ ২০ হাজার বেকার জনগোষ্ঠী শ্রমবাজারে প্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে পুনরায় কাজ হারানোয় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে মোট বেকারের সংখ্যা বেড়ে যায়। বিবিএস জানাচ্ছে, ১৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর্মহীনদের বেকার ধরা হয়। তবে এটি চূড়ান্ত সংখ্যা না। তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে জরিপের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।
বিবিএস ১৯৮০ সাল থেকে শ্রমশক্তি জরিপ পরিচালনা করে এলেও ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে কাজ শুরু করে। দেশের ১ হাজার ২৮৪টি এলাকার মোট ৩০ হাজার ৮১৬টি খানার তথ্য সংগ্রহ করে শ্রমশক্তি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। গত মার্চ শেষে দেশে মোট শ্রমশক্তির পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে নারী ২ কোটি ৫৩ লাখ এবং পুরুষ ৪ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার।
এক বছর আগে ২০২৩ সালের মার্চে শ্রমশক্তির পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার। এ হিসাবে এক বছরে নতুন করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করেছে ৬০ হাজার নারী-পুরুষ, যা আগের বছরের চেয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেশি।
বিবিএস জানিয়েছে, তিন মাস আগে গত ডিসেম্বরে মোট শ্রমশক্তির সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। তাদের মধ্যে ৭ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার নারী-পুরুষ কাজে নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে নারী ২ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার ও পুরুষ ৪ কোটি ৬৭ লাখ ১০ হাজার। খাতভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, কাজে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে কৃষিতে ৩১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, শিল্পে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও সেবা খাতে ২৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুসারে জরিপ পরিচালনার কথা জানিয়েছে বিবিএস। আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই, যারা গত সাত দিনে ন্যনতম এক ঘণ্টাও কাজ করেননি বা পাননি কিন্তু গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ খুঁজেছেন।
কর্মজীবীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টা মজুরি বা বেতনের বিনিময়ে কাজ করেছেন এবং পরিবারের ভরণপোষণের জন্য অন্যনতম এক ঘণ্টা উৎপাদনমুখী কাজে নিয়োজিত ছিলেন, তাদেরই কর্মে নিযুক্ত বলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষার্থী, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি, কাজ করতে অক্ষম, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং কর্মে নিয়োজিত নন- এমন সংখ্যা, যারা শ্রমশক্তির বাইরে আছেন বলে ধরা হয়; তাদের সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার। শ্রমশক্তির মধ্যে যুবদের সংখ্যা চলতি বছরের মার্চে ছিল ২ কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার।
বিবিএসের প্রাক্কলিত তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে দেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৭ কোটি ২৯ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে কর্মক্ষম ১২ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার, যেখানে ৬ কোটি ১ লাখ ৩০ হাজার পুরুষ এবং ৬ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার নারী।