বুধবার, ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

খামারবাড়ির ক্রপসের উচ্চমান সহকারী আমিরের অঢেল সম্পদ

বিশেষ প্রতিবেদক : জ্ঞাত আয় বহির্ভূত প্রায় ৫০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক কৃষি অধিদপ্তরের ক্যাশ (ক্রপস) বিভাগের উচ্চমান সহকারী আমির হোসেন। তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন মাতলুব মিয়া নামের এক ঠিকাদার, যিনি নিজেও বরগুনার বাসিন্দা বলে আবেদনে উল্লেখ করেছেন। তিনি তার আবেদনে বলেন, খামারবাড়ী কীটনাশক অফিস সহকারী বর্তমান কৃষি অধিদপ্তরের ক্যাশ (ক্রপস) বিভাগের উচ্চমান সহকারী আমির হোসেন। বেতন পান ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। অথচ নিজ জেলা বরগুনায় ক্রয় করেছেন প্রায় ৪০০ শতক জমি। ঢাকায় কিনেছেন নিজস্ব ফ্লাট। স্ত্রী রীনার নামে নিয়েছেন ডিলারশিপ, নাম হাওলাদার এন্টারপ্রাইজ। ভাই নাসিরকে দিয়ে বেতাগী বাজারের সার ও কীটনাশকের শো-রুম পরিচালনা করছেন। এতো সম্পদের আয়ের উৎস কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কাগজ আছে, আপনাকে দেয়া হবে। কিন্তু পর পর দুইবার সময় চেয়েও কোন নথি দেখাতে পারেননি। উপরন্তু প্রতিবেদকের ফোন ব্লক করে দিয়েছেন।

সম্প্রতি সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে আমির হোসেন অবৈধ সম্পদের আয়ের উৎস জানা এবং তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে জমা দেয়া এক আবেদনের প্রেক্ষিতে আমির হোসেন বিষয়ে খোঁজ খবর শুরু করেন প্রতিবেদক। দুদকে করা আবেদনে বলা হয়, আমির হোসেনের বাবার নাম আসমত আলী হাওলাদার। স্থায়ী নিবাস বাড়ী খোমতাকাটা, লক্ষীপুরা, ২ নং সদর ইউনিয়ন, বেতাগী উপজেলা বরগুনা। বর্তমানে আমির হোসেন বাস করেন পূর্বরাজাবাজার, ১০/বি, ইন্দিরা রোড়ের নিজস্ব ফ্লাটে। ভাগলের পাড়ে (জোতখালী) হাওলাদার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি গোডাউন নিয়েছেন স্ত্রী রীনার নামে।এই গোডাউনে কীটনাশক ও সার সংরক্ষণ করেন তিনি। এছাড়া বেতাগী গার্লস স্কুলের পাশে ১০ কাঠা জমিসহ আনুমানিক ২ একর (৫ কানি স্থানীয় ভাষায়)জমি ক্রয় করেছেন। পাশাপাশি বেতাগী বাজারে রয়েছে একটি সার ও কীটনাশকের শো-রুম। এটি পরিচালনা করেন তার ভাই নাসির। আবেদনে বলা হয়, বিগত কয়েক বছরের মধ্যেই বেতাগী উপজেলার আশেপাশে এবং পৌরসভার মধ্যে জমি ক্রয়, ঢাকারি বিভিন্ন এলাকায় ফ্লাট ও প্লট ক্রয়, নিজের-স্ত্রীর এবং সন্তানের নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে আমির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, জমি আমার শ্বশ্বুর বাড়ি থেকে পেয়েছি, বাকিটা আমার বাবার কাছ থেকে পাওয়া। উপযুক্ত প্রমাণ দেখতে চাইলে প্রতিবেদকের কাছে সময় চেয়ে নেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, দুইদিন পর আপনার সাথে কাগজপত্র নিয়ে দেখা করবো। দুইদিন পর প্রতিবেদক ফোন দিলে তিনি তার স্ত্রী রীনার সাথে কথা বলতে বলেন। রীনা ফোনেই প্রতিবেদককে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। বলেন, আপনি আমাকে চেনেন না। টাকা নেয়ার জন্য তাদের পেছনে লেগেছে প্রতিবেদক বলে চিৎকার চেঁচামেচি করেন এবং শেষে বলেন, আগামী দিন একজন ব্যারিস্টার ভাই এবং ডিএমপি কমিশনারের পিএস (ভাতিজা)সহ যথোপোযুক্ত প্রমাণাদি নিয়ে দেখা করবেন। তারপর পরই প্রতিবেদকের ফোনে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক নারী (ট্রুকলারে নাম আমরিন হোসাইন আনতা, নাম্বার +৬১ ৪২১ ৯১৪ ৪২৬) নিজেকে আমিরের মেয়ে পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদককে ঢালাওভাবে স্ক্যামার, অর্থলোভী, হ্যারাসকারী, প্রতারক বলে অভিহিত করেন। একই সাথে এক ফোনেই উড়িয়ে দিতে পারবেন বলে হুমকিও দেন। পরে আমির হোসেনের পক্ষ নিয়ে এক সাংবাদিকও প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে, আমির হোসেনকে তিনি তার কাজিন বলে পরিচয় দেন। তার কাছেও সম্পদের যথাযথ কাগজ চাইলে তিনিও আমির হোসেনকে জানাবেন বলে জানান। এরপর থেকে প্রতিবেদকের ফোন ব্লক করে দেন আমির হোসেন। পরে আমির হোসেনের স্ত্রীর ফোনে ফোন দিলে রীনা প্রতিবেদককে বলেন, আপনার কাছে যাবো না, আপনাকে কাগজ দেখতে হলে আমার বাসায় আসতে হবে। বাসার ঠিকানা চাইলে তিনি বলেন, ফোন নাম্বার যেভাবে পেয়েছেন, সেভাবে আমাদের বাসা খুঁজে বের করেন। একই সাথে আবারও প্রতিবেদককে দেখে নেয়ার হুমকি দেন তিনি।

প্রতিবেদন প্রকাশের দিন খামারবাড়ী অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, কীটনাশক শাখা থেকে ক্যাশ (ক্রপস) শাখায় বদলী হয়েছেন। তার সাথে দেখা করলে আবারও তিনি প্রেস সচিব শ্যামল কর্মকারের কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়ে আসতে হবে জানান। বলেন, আমি কাগজপত্র প্রেস সচিব শ্যামল সরকারের কাছে দিবো, আপনাকে ওখান থেকে নিয়ে আসতে হবে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমির হোসেনের বউ রীনারা ৫ ভাই-বোন। রীনার বাবার নাম দলিল উদ্দিন হাওলাদার। এই দলিল হাওলাদারের মোট জমির পরিমান মাত্র দেড় কানি বলে জানিয়েছে স্থানীয় ভূমি অফিস। আমির হোসেনের শো-রুম ব্যবসায়ী ভাই নাসির অর্থতসরুফের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্রপস উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার ধারণা নাই। লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *