বুধবার, ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

বাবা হত্যার বিচার চাই: আনার কন্যা ডোরিন

যায়যায় কাল প্রতিবেদক : ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলকাতায় খুন হওয়ার খবর দেশে আসার পর কাঁদতে কাঁদতে খুনিদের বিচার চাইলেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন। বুধবার দুপুরে ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, আমি জেনেছি আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান।

কলকাতায় পৌঁছে তিনি ওঠেন তার বন্ধু, বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। কিন্তু ১৬ মে থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছিল না তার পরিবার। আনার নিখোঁজ জানিয়ে ১৮ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। সেখানে বলা হয়, ১৩ মে দুপুরে সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি আনার। তবে তা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে আসা এক বার্তায় বলা হয়, দিল্লি যাচ্ছেন তিনি।

এদিকে আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন পরে ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বাবার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান। পরের কয়েক দিনে দুই দেশের পুলিশের মধ্যে যোগাযোগের পর বুধবার সকালে কলকাতার সংবাদমাধ্যমে আনারের খুন হওয়ার খবর আসে। পরে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আনোয়ারুল আজীম আনারকে কলকাতার একটি বাসায় ‘পরিকল্পিতভাবে খুন’ করা হয়েছে। তবে তার মরদেহ এখনও পাওয়া যায়নি।

ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য পওয়ার পর বাংলাদেশের পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে খুনিরা বাংলাদেশের। ওই ঘটনায় জড়িত আরো কয়েকজনকে তারা খুঁজছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পর ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এমপি আনারের মেয়ে ডোরিন। সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, পুলিশ যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের তিনি চেনেন কি না।

উত্তরে ডোরিন বলেন, আমি তাদের কাউকেই চিনি না। কিন্তু তাদের চিনতে চাই, জানতে চাই কেন তারা আমার বাবাকে হত্যা করল।

কাউকে সন্দেহ করছেন কি না– এ প্রশ্নে এমপি আনারের মেয়ে বলেন, কাউকে আমি সন্দেহ করছি না। কিন্তু খুনিদের পরিচয় জানতে চাই। তারপর আমি আমার সন্দেহের কথা প্রকাশ করব।

সংসদ সদস্য আনারের দুই মেয়ের মধ্যে ডোরিন ছোট। বড় মেয়ে চিকিৎসক, আর ডোরিন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে পড়ছেন।

তিনি বলেন, সর্বশেষ বাবার সঙ্গে তার ভিডিও কলে কথা হয়েছিল। বাবা তাকে বলেছিলেন, তিনি দুদিনের মধ্যেই ভারত থেকে ফিরবেন। তিনি ঢাকায় ফিরে তাকে দাঁতের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন।

কাঁদতে কাঁদতে ডোরিন বলেন, আমি এতিম হয়ে গেলাম। যারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে, আমি তাদের বিচার চাই, ক্রস কিংবা ফাঁসিতে ঝুলতে দেখতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার মায়ের মত। তিনি অনেক সাহায্য করছেন আমাদের, তার কাছেও আমরা বিচারের আর্জি জানাই।

ডোরিন বলেন, আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে খবর পেয়ে আমি হারুন আঙ্কেলের (গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ) সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমরা মামলা করতে চাই সে বিষয়ে তাদের সহায়তা নিতে এসেছি।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি (ডোরিন) মামলা করতে চান। আমরা বলেছি সর্বশেষ তিনি যে জায়গা থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন, সেখানেই মামলাটা করতে হবে। তিনি এমপি হোস্টেল থেকে বেরিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন বলে তার কন্যা জানিয়েছেন। সে কারণে আমরা তাকে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।

হারুন বলেন, এই ঘটনায় কয়েকজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। এই হত্যার মোটিভ কি সেটা জানার চেষ্টা করছি। তিনি একজন জনপ্রিয় সংসদ সদস্য ছিলেন। তাকে হত্যার ঘটনায় শোকে মুহ্যমান এলাকাবাসী, আমরাও শোকাহত।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ