মঙ্গলবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

জমি দখলে রাখতে মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ভাতিজাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে চাচার বিরুদ্ধে। জমি দখলে রাখতে মারধর ও লুটপাটের মামলা করেন ওই বৃদ্ধ। এখন ন্যায় বিচারের আশায় ভাতিজারা ঘুরছেন আদালত ও মানুষের দ্বারে দ্বারে। অভিযুক্ত চাচা হাবিব উল্ল্যা লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডস্থ পূর্ব সাগরদী এলাকার আজিম উদ্দিন হাওলাদার বাড়ির মৃত আবদুল লতিফ হাওলাদারের ছেলে। ভুক্তভোগীরা তাঁর ভাই মৃত ছিদ্দিক উল্ল্যার ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী।

স্থানীয়রা জানান, বিরোধকৃত জমি দীর্ঘদিন ধরে হাবিব উল্ল্যা ভোগদখল করছেন। কয়েকদিন পূর্বে সেখানে ঘর নির্মান করেন তিনি। সে বিষয়ে তার ভাতিজা অহিদ উল্ল্যা সেলিম গত জানুয়ারি মাসে রায়পুর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক সালিশি বৈঠক হয়। এতে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে জমি পরিমাপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি সদস্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সার্ভেয়ারের (আমিন) মাধ্যমে পাঁচ জন অংশীদারের মধ্যে জমিটি বন্টন করে দেয়। সে অনুযায়ী সকলে তাদের জমি ভোগদখল করছেন। বিক্রিও করেছেন একজন। তবে হুমায়ুন কবির শিবলুদের অংশে চাচার (হাবিব উল্লাহ) ঘর থাকায় তাদের পক্ষে ভোগদখল করা সম্ভব হয়নি। ঈদুল ফিতরের পর ১৪ এপ্রিল চাচাকে ঘরটি সরিয়ে নিতে বলেন হুমায়ুন। এতে অপারগতা প্রকাশ করলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তবে কোন মারামারি, টাকা ও ঘরে থাকা মালামাল লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। তবুও আদালতে হুমায়ুন, তাঁর ভাই ওমর ফারুক সাকিল, বোন রাহিমা বেগম ও মা ফাতেমা বেগমকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন হাবিব উল্ল্যা।

মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধ হয়ে দা, চেনি, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হাবিব উল্ল্যার ঘরে প্রবেশ করে। এরপর তাকে মারধর ও শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টা করা হয়। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় ঘরবাড়ি, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন এবং ঘরে থাকা বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল। যার আনুমানিক মূল্য ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

হাবিব উল্ল্যাহ বলেন, আসামীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। কিছুদিন পূর্বে আমাকে মারধর ও ঘরবাড়ি লুটের ঘটনায় আদালতে মামলা করেছি। যা এখন বিচারাধীন রয়েছে। আর বিরোধীয় জমিটি প্রায় ৪০ বছর ধরে আমি ভোগদখল করছি। হঠাৎ করে মেম্বার ওই জমি আমার ভাই ও ভাতিজাদের পরিমাপ করে দিচ্ছে। এই ভাগ-ভাটোয়ারা আমি মানিনা। এটি আমার জমি, এখানেই আমার ঘর থাকবে।

হুমায়ুনরা কত টাকা ও কি কি লুটপাট করেছে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের সঠিক কোন উত্তর দেয়নি হাবিব উল্ল্যা। তবে তিনি বলেন, ঘটনার সময় কি ঘটেছিলো সব মামলায় উল্লেখ আছে। আর সাক্ষীগণ তাৎক্ষণিক উপস্থিত না থাকলেও পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে এসেছেন ও সবকিছু শুনেছেন।

অহিদ উল্ল্যা সেলিম বলেন, বিরোধকৃত জমি কয়েক বছর ধরে চাচা হাবিব উল্ল্যা ভোগ দখল করছেন। ওনাকে বারবার বলার পরও জমিটি অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে বন্টন করেননি। জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। কিছুদিন পূর্বে মেম্বার জমিটি আমাদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দিয়েছেন। কিন্তু সেটি চাচা মানেনি। ভাড়াটে লোক দিয়ে তৈরি করা ঝুপড়ি ঘরটিও সরিয়ে নেয়নি। উল্টো হয়রানির উদ্দেশ্য তিনি ছিদ্দিক উল্ল্যার (চাচা) স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

হুমায়ুন কবির শিবলু বলেন, চাচা (হাবিব উল্ল্যা) আমাদের জমিতে টিনের ঘর করে রেখেছেন। ঘটনার দিন (১৪ এপ্রিল) ওনাকে ঘর সরিয়ে নিতে বলি। এতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের গালমন্দ করেন। তখন ওনার সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। তবে ওনাকে মারধর, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়নি। অথচ ওনি আমাদের নামে আদালতে এসব ঘটনা উল্লেখ করে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার সাক্ষীরাও ঘটনার সময় ছিলেন না, তারা বিষয়টি জানেনও না। মূলত, হয়রানি ভয়-ভীতি লাগানোর জন্য তিনি কাজটি করেছেন। যাতে ওই জমিতে আমরা না যায়। তাইতো বাধ্য হয়ে ন্যায় বিচারের আশায় ঘুরছি আদালত ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার মুরুব্বিদের দ্বারে দ্বারে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহিদ হোসেন সুমন বলেন, রায়পুর থানার নির্দেশে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছি। উভয় পক্ষ ও এলাকার মুরুব্বিদের উপস্থিতিতে জমিটি পরিমাপ করি। পরে সেটি ৫ জন মালিকের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি। সেই ভাগ-বাঁটোয়ারা ওই সময় সকল পক্ষই মেনে নিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে হাবিব উল্ল্যা সেটি মানেনি এবং হুমায়ুনদের জমিতে থাকা ঘরটি সরিয়ে নেয়নি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ