মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী : বিশেষ আমন্ত্রণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার বার এসোসিয়েশনের সংবর্ধনা পেয়েছেন নীলফামারীর বিশিষ্ট আইনজীবী, লেখক ও গবেষক জাহাঙ্গীর আলম সরকার। সম্প্রতি ভারতের কোচবিহার বার এসোসিয়েশন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে বার এসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে এ সংবর্ধনা প্রদান করেন।
জানা যায়, ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতের ঐতিহ্যবাহী কোচবিহার বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিজ্ঞ আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ এর সঞ্চালনায় সভাপত্বি করেন কুচবিহার বারের সভাপতি বিজ্ঞ আইনজীবী আব্দুল জলিল। উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কোচবিহার বার এসোসিয়েশনের বিজ্ঞ আইনজীবীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের কোচবিহার বার এসোসিয়েশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যের শুরুতে জাহাঙ্গীর আলম গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অমর শহিদকে, যাঁদের অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক।
তিনি আরো বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কোচবিহারের অসামান্য অবদান ইতিহাসের অংশ। কোচবিহারের সাথে রংপুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, ভাষা, সংস্কৃতির একই সূত্রে গাঁথা। দেশভাগের পর যোগাযোগ বন্ধ হলেও দুই অঞ্চলের সাধরণ মানুষের ভালোবাসা হারিয়ে যায়নি। ১৯৭১ যখন রংপুর-নীলফামারীর সাধারণ মানুষরা জীবন বাঁচানোর জন্য সীমান্ত পেরিয়ে কোচবিহারের মাটিতে পা রাখে, তখন কোচবিহারবাসী সুরক্ষা দিয়েছিলেন। কোচবিহারের সর্বস্তরের মানুষ তথা আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক সম্মিলিতভাবে বরণ করে নিয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ শরনার্থীদের। জাহাঙ্গীর আলম সরকার তাঁর বক্তৃতায় বলেন আজ কোচবিহার বার এসোসিয়েশনে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আমি কৃতজ্ঞচিত্তে মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের অবদানের কথা স্বীকার করছি। আপনারা আমাকে যে সম্মান দিলেন সেটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই সম্মান শুধু আমার নয় বরং দুই বাংলার সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করবে।
পরে, ভারতের কোচবিহার বার এসোসিয়েশন লাইব্রেরীতে স্বরচিত ১৫টি গ্রন্থ প্রদান করেন অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সরকার।
প্রসঙ্গত, পেশায় আইনজীবী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচ.ডি গবেষক হিসেবে গবেষণারত। খরনবৎধঃরড়হ ধিৎ ড়ভ ইধহমষধফবংয : ঘরষঢ়যধসধৎর ৎবমরড়হ শিরোনামে তিনি গবেষণা করছেন। নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকার। আইন, আঞ্চলিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলম সরকারের মোট ৩৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ইতোমধ্যে সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) কর্তৃক প্রদত্ত মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড, ২০০৯ অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি ২০১৮ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার সার্ধশতবার্ষিকী স্মারক সম্মাননা গ্রহণ করেছেন। একই সাথে তিনি বাংলাদেশের বিভাগীয় লেখক পরিষদ, রংপুর-এর গুণী সাহিত্যিক সম্মাননা, ২০২০ ও সৃজনশীল সংস্কৃতি গবেষক হিসেবে জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা, ২০২১ গ্রহণ করেছেন।