বুধবার, ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা হাজী দানেশের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

খাঁন মো. আ. মজিদ, দিনাজপুর : ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী হাজী মোহাম্মদ দানেশের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন মারা যান তিনি।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ ১৯০৩ সালে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মৌলভী সালামত উদ্দীন।

১৯২৩ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হাজী দানেশ। রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর এক বছর দিনাজপুর জুনিয়র মাদরাসায় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে উচ্চশিক্ষা লাভে আলীগড় গমন করেন। সেখানকার মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে এমএ ও ১৯৩২ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন হাজী দানেশ। ১৯৩৩ সালে দিনাজপুর জজ কোর্টে শুরু করেন আইন ব্যবসা।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন ১৯৩৮ সালে। ওইবছর ন্যাপের প্রথম সহ-সভাপতি ও পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি ও রাজনৈতিক তৎপরতায় গ্রেফতার হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে (লেলিনবাদী) যোগদান করেন হাজী দানেশ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাজী মোহাম্মদ দানেশ দিনাজপুর, রংপুর ও জলপাইগুড়িসহ সারা উত্তরাঞ্চলে কৃষকদের এক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। উপমহাদেশে এই আন্দোলন ঐতিহাসিক ‘তেভাগা আন্দোলন’ নামে পরিচিতি।

দিনাজপুরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রথমে হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে তার নামেই বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া তার নামে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুরে একটি কলেজও রয়েছে।

১৯৭১ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে পদত্যাগ করে মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। পরে ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন।

বাকশাল সরকারের পতনের পর ১৯৭৬ সালে তিনি জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন পুনরুজ্জীবিত করেন। কিন্তু ১৯৮০ সালে এই দল বিলোপ করে ‘হাজী দানেশ গণতান্ত্রিক পার্টি’ নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে গণতান্ত্রিক পার্টি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে একীভূত করা হয়।

হাজী দানেশ জাতীয় পার্টির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জাতীয় কৃষক পার্টির প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে দিনাজপুরে নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন তিনি।

১৯৮৬ সালের ২৮ জুন ভোর ৪টা ২৫ মিনিটে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি এই কৃষক নেতা। তাকে দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে দাফন করা করা হয়।

খবর নিয়ে জানা গেছে, তার মৃত্যুবাষির্কীতে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুরে হাজী দানেশ কলেজে ও পারিবারিকভাবেও কোনো কর্মসূচি নেই। তার পরিবারের কেউ এখন আর দিনাজপুরে থাকেন না।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ