শনিবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংবাদ প্রকাশ হলে সাংবাদিকদের নামে মামলার হুমকি

আরডিএর বিধি না মেনে মতিহারে বহুতল ভবন নির্মাণ

পাভেল ইসলাম মিমুল, রাজশাহী ব্যুরো : ইমারত বিধিমালা (বিল্ডিং কোড) লঙ্ঘনে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) দফতরে প্রায় প্রতিদিন অভিযোগপত্র জমা পড়ছে।

নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণের কারণে আশপাশের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একটার পর একটা অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। ফলে নগরীতে নকশাবহির্ভূত বহুতল ভবনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভুক্তভোগী নগরবাসীদের অভিযোগ,পাঁচতলার অনুমোদন নিয়ে সাততলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।সাততলার অনুমোদন নিয়ে ১০ তলা ভবনও বানানো হচ্ছে।

ইমারত বিধিমালা উপেক্ষা করে সড়ক ঘেঁষে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী রাস্তা ও ফাঁকা জায়গা ছাড়ার নির্দিষ্ট বিধি থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না।

ঠিক এমন ভাবেই রাজশাহী মহানগরীর কাজলা বিলপাড়া এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ কাজে ব্যপক অনিয়ম রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে মৃত ওবায়দুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা বেগম,তার মেয়ে আইরিন সুলতানা ও নুসরাত জাহানের নামে।

প্রতিবেশিদের অভিযোগ পেক্ষিতে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচারনসহ অভিযোগকারী প্রতিবেশি ও সাংবাদিকদের নামে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন তারা।

আইরিন সুলতানা ও নুসরাত জাহান রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার কাজলা এলাকার মৃত ওবায়দুল ইসলামের মেয়ে। বর্তমানে তারা মহানগরীর মতিহার থানাধিন কাজলা বিল পাড়া সড়কে একটি বহুতল ভবন নির্মান করেছেন। তবে এই নির্মান কাজে ব্যপক অনিয়ম রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের অভিযোগের পেক্ষিতে গত ২৩ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন খোজ খবর ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,আইরিন সুলতানা ও নুসরাত জাহান এর বিল্ডিং সংলগ্ন উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব দিকের গলির বসতিতে প্রায় ১ হাজার মানুষের বসবাস। মূলত প্রায় ৬ ফিট এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে থাকেন সবাই।

স্থানীয়দের দাবি,তাদের একমাত্র যাতায়াতের রাস্তার বহুতল বিল্ডিং নির্মান করছে আইরিন সুলতানা ও নুসরাত জাহান।

কিন্তু তিনি নিজের জমি বাদে অতিরিক্ত রাস্তার জায়গা (অর্থাৎ রাসিকের) দখল করে বিল্ডিং নির্মান করছেন। শুধু তাই নয় বিল্ডিং-এর উপরে কার্নিস গুলি বাড়িয়ে দিয়েছেন রাসিকের রাস্তার উপরে। ফলে রাস্তার প্রবেশ মুখ সরু হয়ে গেছে। যার ফলে যে কোন ধরনের দূর্ঘটনা,যেমন অগ্নিকান্ড বা প্রকৃতিক দূর্যোগের মতো ঘটনা ঘটলে এই বসতিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী প্রবেশ করতে পারবেনা। আর তাই আইরিন সুলতানা ও নুসরাত জাহান নিয়ম বহিভূত বিল্ডিং নির্মান কাজ বন্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের দাবি স্থানীয়দের।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বহুতল ভবন নির্মাণের সময় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী রাস্তা ও ফাঁকা জায়গা ছাড়ার নির্দিষ্ট বিধি থাকলেও তা করেননি তারা। এমনকি এই স্থাপনার অধিকাংশেরই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া,ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে জায়গার মালিকেরা কোনো ধরনের জমি ছাড় দেননি। একটি ভবনের সঙ্গে আরেকটি ভবন প্রায় লেগে আছে। এ কারণে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় এসব ভবনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সহ জরুরী সেবা কর্মীরা সহজে পৌঁছাতে পারবেন না। ৭ তলা পর্যন্ত ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে,কিন্তু ৭ তলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। উঁচু উঁচু ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে। অথচ এসব ভবনের ভেতরে যাঁরা বসবাস করবেন,তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে কারও কোনো চিন্তা নেই?

ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় বলা হয়েছে,সাততলার চেয়ে উঁচু ভবনের ক্ষেত্রে আগুন শনাক্তকরণ যন্ত্র,ধোঁয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র,পানি ছিটানোর ব্যবস্থা ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই বহুতল ভবন নির্মাণে এসবের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।

আরডিএর বিধি না মেনে বহুতল ভবন নির্মাণ এমন বিষয়ে জানতে সেলিনা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি তার বাড়ি নির্মান বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবেনা।

আর তার ছোট মেয়ে জামায় বলেন মতিহার থানার ওসি তদন্ত এসআই সাহিন আমাদের লোক। এই ইমারত নির্মান নিয়ে কোন রকম সংবাদ প্রকাশ বা বেশি বাড়াবাড়ি করলে থানায় তুলে নিয়ে এসে মামলা দিয়ে জেলের ভাত খাওয়াবো বলে সাংবাদিকদের হুমকি দেন।

এ নিয়ে ওই এলাকার ভূক্তভোগী মোঃ মাসুম বলেন, সেলিনা বেগম,তার দুই মেয়ে আইরিন সুলতানা ও নুসরাত জাহান এবং তাদের স্বামীদের একাধিকবার অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। তার দাম্ভিকতা হলো তিনি একজন বিত্তবান মানুষ। প্রভাবশালী মহল দিয়ে চাপ প্রয়োগ ও দেখে নেওয়ার হুমকি এবং টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করেই কাজ করছেন। এমন কথাও তিনি প্রকাশ্যে বলছেন।

কিন্তু আইরিন সুলতানা ও নুসরাত জাহান এর মা যেন অপ্রতিরোধ্য। তিনি এলাকাবাসীকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে তার নির্মাণ করা অব্যাহত রেখেছেন।

মাসুম আরো বলেন,সেলিনা বেগম তার মেয়ে জামায়দের দিয়ে আমাকে বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজের চেষ্টা করেছে। আমি তাদের কথায় রাজি না হলে তারা আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।

জানতে চাইলে,আরডিএ’র ইমারত পরিদর্শক মোঃ মফিদুর রহমান রনি জানান,ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অমান্য ও আইন উপেক্ষা করে দুর্নীতির মাধ্যমে ভবন নির্মাণের কোন সুজগ নেই। করলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর আপনাদের এমন কোন বহুতল ভবনের বিষয়ে অভিযোগ থাকে তবে আপনারা লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো বলে জানান তিনি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ