বুধবার, ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফটিকছড়িতে বন্যায় ৩০ হাজার কৃষক নিঃস্ব

কামরুল হাসান, ভুজপুর(চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অতি বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে গত সপ্তাহে মারাত্মক বন্যায় হাজারো কৃষকের স্বপ্ন মুহূর্তে মিশে গেল। তলিয়ে গেছে হালদা, ধুরুং ও সর্তা পাড়ের ধানক্ষেত। নষ্ট হয়েছে আমন ধানের বীজতলা আর শাক-সবজির বাগান। এতে নিঃস্ব হয়েছে হাজরো কৃষক।

এছাড়া সাড়ে ৩০ হাজার কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে থাকবে সরকার। তালিকা করা হচ্ছে এসব কৃষকের।

জানা যায়, কৃষি উর্বর ফটিকছড়িতে সব মিলিয়ে প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।ভয়াবহ বন্যায় বেশি ক্ষতি হয়েছে উত্তর ও মধ্য ফটিকছড়িতে। কৃষি অফিস বলছে, প্রাথমিক হিসাবে শাক-সবজি, ধানসহ ৩০ হাজার ৪ শত ৬৪ জন কৃষকের ১২০কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । মন্ত্রণালয় ও কৃষি অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে। প্রণোদনা এলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে। নিজেরদের ভান্ডারে বেশকিছু বীজ রয়েছে তা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার কথাও জানায় তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা ১৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার আনুমানিক ৩০০-৩৫০ টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে প্লাবিত অধিকাংশ এলাকার পানি কমতেই বেরিয়ে আসছে বন্যার ক্ষত। বন্যার পানিতে গ্রামীণ সড়কগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগান বাজার,দাঁতমারা ও সুয়াবিল এলাকায় অসংখ্য কাঁচা বসতঘর ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া কৃষিতেও বড় ক্ষতি হয়েছে এই বন্যায়। বানের জলে ভেসে আসা বালুতে চাপা পড়েছে ধানের ক্ষেত। এ ছাড়া পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে আমনের আবাদও।

দাঁতমারা ইউপির কৃষক মো. মাসুদ (৩৫) বলেন, ১২০ শতক জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন তিনি। তার জমির সব ধানই পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর উৎপাদিত ধান বিক্রি করে যে টাকা পাবেন তা দিয়ে সংসারের কাজে লাগানোর স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু সব স্বপ্ন ভেসে গেলো বন্যার পানিতে। এ ফসল আবাদ করতে তাকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়ে বলেও জানান তিনি।

একই এলাকার কৃষক হেলাল (৪৫) বলেন, তিনি পুরোপুরিই কৃষি নির্ভর। এ বছর আমনের আবাদ করেছেন ২৮০ শতক জমিতে। তার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে বন্যার পানিতে। নতুন করে ফসল আবাদ করার আর সময় নেই। কিভাবে এবছর সংসারের খরচ চালাবেন সেই দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।উপজেলার অনেক কৃষক ঋণ করে এবং ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কৃষি ক্ষেত করেছিলেন। কিন্ত বন্যার পানিতে সব ভেসে যাওয়ায় তাদের চোখেমুখে এখন অমানিষার ঘোর অন্ধকার। তারা কিভাবে আবার ঘুরে দাড়াবেন এমন দুশ্চিন্তা তাদের মধ্যে।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি বন্যায় পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের বীজতলা, আমন ধান ও সবজি। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকার মতো। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করছি। তাদেরকে বীজ ও সারসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *