বুধবার, ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বেরোবির তিন শিক্ষকের নামে মিথ্যা মামলা

মো. রিফাত ইসলাম, বেরোবি: রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এবং আহতের ঘটনায় একাধিক মামলায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে সমন্বয়ক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চাপে মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষকরা হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মোহা. মাহমুদুল হক।

গত ১৬ জুলাই আবু সাঈদ হত্যা মামলায় শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদকে মামলার আসামি করা হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, কয়েকজন সমন্বয়ক ও একজন শিক্ষকের চাপে পড়ে আসাদুজ্জামান মন্ডলকে আসামি করা হয়। আসাদুজ্জামান মন্ডলকে আসামি না করলে কয়েকজন সমন্বয়ক আন্দোলনের হুমকি দেন। পরে আসাদুজ্জামান মন্ডলকে মামলার আসামি করা হয়।

অন্যদিকে অন্য একটি মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়, বেআইনি জনতাবদ্ধে মারাত্মক অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত এবং আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে সাধারণ ও গুরুতর জখম,অঙ্ঘানী, হত্যার ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হুমকি দানের অপরাধে গত ২৫ আগস্ট তাবিউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করেন মো. কাশেম (৪৩)।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক মশিউর রহমান ও মাহামুদুল হক যোগসাজশে পতাকা মামলা দিয়ে সফল হয়নি তাই নতুন করে হয়রানির করার জন্য বাদী ও আইনজীবীর সাথে যোগসাজশে মিথ্যা মামলা দিয়েছে মাহমুদুল হক।

অন্যদিকে, গত ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউনের দিন রংপুর মর্ডান হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় মানিক মিয়া নামে এক অটোরিকশা চালক। পরে ২০ জুলাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে তাজহাট থানায়। তখন মাহামুদুল হকের নাম ছিল না। পরে ১৯ অগাস্ট নিহত মানিক মিয়ার মা নুর জাহান বেগম বাদী হয়ে মামলা করেন। সেখানে ১১৯ জনের মাহমুদুল হককে আসামি করা হয়।

এই বিষয়ে মোহা. মাহমুদুল হক বলেন, আমি সাত বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৯ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাই। ২০১২ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করে একজন শিক্ষক নিয়োগ পান, যার বিরুদ্ধে আমি আবার হাইকোর্টে মামলা করি। রুল দেয় কোর্ট এই মর্মে যে কেন জালিয়াতির জন্য তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত এক কমিটি অবৈধ নিয়োগের প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। ওই শিক্ষক তার চাকরি বাঁচাতে বাদী বা আইনজীবীকে প্রভাবিত করে আমাকে আসামি করতে পারেন।

মামলার বিষয়ে আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ বলেন, আমি সেদিন প্রশাসনের অনুরোধক্রমে প্রক্টর স্যারসহ ঘটনাস্থলে যাই তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলে সেই স্থান ত্যাগ করি। আবু সাঈদকে পুলিশ যে গুলি করেছে সেই ভিডিও পুরো দেশবাসী দেখেছে, আমি অনেক আগেই সেখান থেকে চলে আসি। আমাকে ষড়যন্ত্র করে মামলা দেয়া হয়েছে।

আবু সাঈদ হত্যা মামলার বাদি তার ভাই রমজান আলি বলেন, ছাত্র ও আইনজীবীরা তদন্ত করে যাদের নাম পেয়েছে তাদের নামে মামলা হয়েছে।

আবু সাঈদের আরেক ভাই আবু হোসেন বলেন, আমরা তো আর ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আন্দোলনকারী ছাত্র, সমন্বয়ক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলছে তাদেরকেই আসামি দেওয়া হয়েছে।

বাদী নিহত মানিক মিয়ার মা মোছা. নুরজাহান বেগম বলেন, আমি মামলা করছি আমি বুঝবার পারিনি। মামলা কিভাবে সাজাইছে তাও আমি জানি নে। আমি তো নামও লেখতে পারি না বাবা। তাও কলম আমার হাতে দিয়া নাম লেখায়। আমি বলছি সই দিব না, উকিল বলে লেখো তো।

মাহামুদুল হককে চিনেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, না, আমি চিনি না। আমি খুবই দুঃখিত বাজান।

কিভাবে মাহামুদুল হকের নাম মামলায় আসলো এ প্রসঙ্গে মামলার আইনজীবী আলাউদ্দিন বলেন, আমি তো এইটা বলতে পারবো না। এইটা বাদী বলতে পারবে।

এদিকে গত ২৭ আগস্ট দুপুরে রংপুর আদালত চত্বরে হত্যা মামলায় নিরাপরাধ মানুষকে যুক্ত করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন রংপুরের সমন্বয়করা।

সমন্বয়করা আরও বলেন, মামলায় এমন কিছু মানুষ আসামি হয়েছে, যারা চায়ের দোকান করে, বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক। অথচ তারা এসবে অভিযুক্ত নয়।

বেরোবির সমন্বয়ক সুমন মিয়া বলেন, সমন্বয়করা কোনো পরিবারকে এমন কোনো চাপ দেয়নি। যদি এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। কয়েকটা মামলায় শিক্ষকদের আসামী করা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু মামলার এজাহার পড়া ছাড়া আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, সঠিক সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকলে মামলার গুরুত্ব কমে যায়। হয়রানির স্বীকার হন নিরপরাধ মানুষেরা।একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া সন্তান হারানোর কষ্ট বা বাবা হারানো কষ্ট মারাত্মক কষ্ট কিন্তু আমাদের মামলা টা যেন এমন না হয় যাতে প্রতিপক্ষকে হয়রানি বা গাইল করা। মামলা টা যেন এমন হয় যাতে সত্য বের হয়ে আসে। মূল অপরাধীরা যাতে সাজা পায়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ