মিনহাজ আলী, শিবগঞ্জ (বগুড়া): বগুড়ার শিবগঞ্জে মুখোমুখি অবস্থানে উপজেলা বিএনপির দুই পক্ষ। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে আওয়ামী লীগের দালাল ও চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন, মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ করছেন। এতে সমালোচনার ঝড় বইছে এই এলাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে।
জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপি নেত্রী বিউটি বেগম ও পৌর বিএনপির সদস্য, সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমান মতিনের সঙ্গে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলমের দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়। পরে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর মীর শাহে আলম উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে এই দুই পক্ষের দূরত্ব আরো বেড়ে যায়।
বিউটি বেগম বগুড়া জেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে নিজ এলাকা শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বেশ কিছুদিন আগে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে বিউটি বেগম অভিযোগ করে বলেন, মীর শাহে আলম ১৪/১৫ বছর বয়সী ছেলেদের দলে পদ দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি শুরু করেছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে তার মন মত ক্যাডারদের দলীয় পদে আসীন করেছে। ত্যাগী অনেক নেতাকে বহিষ্কার করেছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি বিএনপির ত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমরা আওয়ামী লীগের আমলেও মামলা খেয়েছি। এখনও মীর শাহে আলমের ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি।
মতিয়ার রহমান মতিন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে, শিবগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য হিসেবে ছিলেন তিনি।
এদিকে বিএনপি নেতা মতিয়ার রহমান মতিন বলেন, আমি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ইতোপূর্বে পৌর নির্বাচনে বেশ কয়েকবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আমার প্রত্যেক নির্বাচনে মীর শাহে আলম আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে। বর্তমানে টিসিবি ডিলারদের কাছ থেকে শাহ আলমের লোকজন চাঁদা দাবি করছে। পুকুর দখল করছে। নিরীহ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আমি তাঁর এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছি পরে কুশপুত্তলিকা দাহ করেছি। একারণে আমাকে পৌর বিএনপির সদস্য পদ থেকে গতকাল অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এদিকে বিএনপির সাবেক নেতা মতিয়ার রহমান মতিনের সংবাদ সম্মেলনের পর মতিন ও বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে মীর শাহে আলমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি।
আনীত এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম জানান, বিউটি ও মতিয়ার রহমান মতিন আওয়ামীলীগের দোষর। বিউটি সৈরাচার হাসিনার আমলে দলের নির্দেশ অমান্য করে একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে হাত মিলিয়ে এমপি ইলেকশন করেছে। মতিয়ার রহমান মতিন জাতীয় পার্টির নেতা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর ভোট করেছে। বর্তমানে তাঁরা দলকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা কোন বিএনপি নেতার নামে মামলা করিনি। যারা আওয়ামী লীগ সরকারের দোষর ছিলো এবং অপরাধকর্ম করেছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাদেরকেই আসামি করা হয়েছে।
তবে, উপজেলার তৃণমুল পর্যায়ের সাধারণ কর্মীরা বলছেন, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলে আসন্ন নির্বাচনে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে৷ যা বিএনপির দুর্গ খ্যাত শিবগঞ্জ আসনটি হারানোর সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।