যায়যায়কাল প্রতিবেদক : গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা জানতে চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।
আগামী ১৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিশননের ই-মেইল, ডাক বা সশরীরে কমিশনের কার্যালয়ে হাজির হয়ে ভিকটিম পরিবারের সদস্যরা গুমের অভিযোগের তথ্য জানাতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনের সংযুক্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা জজ বুলবুল হোসেনের সই করা গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তথা পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি, অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি, বিশেষ শাখা-এসবি, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআই, প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর-ডিজিএফআই, কোস্ট গার্ডসহ দেশের অন্য যে কোনো আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী সংস্থার কোনো সদস্যের মাধ্যমে কেউ গুমের শিকার হলে বা ভিকটিমের পরিবার অভিযোগ দিতে পারবে।
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, যারা দেশে গত সাড়ে ১৫ বছরে গুমের ঘটনার তদন্ত ও বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গুমের গুরুত্ব অভিযোগ ছিল, যেখানে সরকারের বিরাগভাজন হলে বছরের পর বছর বন্দিশালায় আটকে রাখার ঘটনা বহুল আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়।
সেই হিসাবে গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন সময়কাল ঠিক করেছে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে কমিশন অব ইনকোয়ারি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গুমের ঘটনার ভিকটিম নিজে অথবা পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয়-স্বজন বা গুমের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যে কোনো ব্যক্তি সশরীরে কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অথবা ডাকযোগে অথবা কমিশনের ইমেইলে আগামী ১৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতি কর্মদিবস সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।
তবে এই সময়সূচি অনুযায়ী অভিযোগ দাখিলের জন্য হটলাইনের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার অনুরোধ করেছে কমিশন।
প্রতিটি অভিযোগনামায় অন্যান্য তথ্যসহ অভিযুক্ত গুমের ঘটনার সুনির্দিষ্ট বিবরণ, ঘটনার স্থান, তারিখ ও সময়, অভিযোগকারী ও তার পিতা-মাতার নাম, ভিকটিমের নাম ও তার পিতা-মাতার নাম, ভিকটিমের সঙ্গে অভিযোগকারীর সম্পর্ক, অভিযোগকারী ও ভিকটিমের ডাক ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল এবং অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি-সংস্থার নাম-ঠিকানা ইত্যাদি অবশ্যই লিখতে বলেছে কমিশন।
অভিযোগনামায় বর্ণিত গুমের ঘটনার সমর্থনে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি, সাক্ষীদের নাম-ঠিকানার তালিকাসহ অভিযোগকারী ও ভিকটিমের জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে) দাখিল করার জন্য অনুরোধ করেছে কমিশন, যেখান থেকে পরবর্তীতে প্রয়োজনবোধে অভিযোগ দাখিলকারী ও অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে তারা।
দেশে গুমসংক্রান্ত ঘটনার তথ্য সংগ্রহসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে যোগাযোগ করে এই কমিশন প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও সহায়তা গ্রহণের উদ্যোগ নেবে।=
কমিশনের হটলাইন নম্বর: ০১৭০১৬৬২১২০, ০২-৫৮৮১২১২১। ইমেইল decommission.bd@gmail.com
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করে দিয়েছে সরকার। এই কমিটি গঠন করে গত ২৭ অগাস্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।