
যায়যায়কাল প্রতিবেদক : যুদ্ধাবস্থার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের লেবানন থেকে দেশে ফিরতে ১ হাজার ৮০০ বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন; আগামী রোববারের পর থেকে তাদের ফেরার পথ খুলছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলছেন, নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ১৬০-১৬৫ জনের মত ঠিকঠাক কাগজপত্র আছে। অর্থাৎ তাদের মধ্য প্রায় ৯০ ভাগই অনিয়মিত হয়ে গেছেন। নিয়মিত-অনিয়মিত সবার ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে লেবানন থেকে বাংলাদেশিদের ফেরানোর বিষয়ে সবশেষ অগ্রগতি তুলে ধরেন তিনি।
যুদ্ধাবস্থার মধ্যে লেবানন থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে আকাশপথে সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কোনো কোনো এয়ারলাইন্স এ উপলক্ষে ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের কিছু করার নাই, বাড়ালেও যাতে আনা যায়, আমরা সেই ব্যবস্থা করছি।
বৈরুত থেকে ফ্লাইটের সংখ্যা কমে আসায় আকাশপথে বড় সংখ্যায় আনা সম্ভব না জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, সবাইকে আকাশপথে আনা যাবে এই নিশ্চয়তা নাই। কারণ, আমরা দৈনিক ৫০ জনের বেশি সিট পাচ্ছি না। মিডল ইস্ট এয়ার যেটা, বৈরুত থেকে যাবে। আপাতত আমরা চাচ্ছি যে, ৫০ জন করে আসতে থাকুক। প্রায়ই দেখা যায়, যারা রেজিস্ট্রেশন করেন, তারা সবাই আসতে চান না। ২০ তারিখের পর থেকে ৫০/৫২/৫৪ এই রকম করে আসবেন, ডকুমেন্টেড যারা। আপাতত এটা ঠিক হয়েছে।
সমুদ্রপথে তুরস্ক হয়ে ফেরানোর বিষয়ও ভাবছেন বলে তুলে ধরেন তিনি।
আমরা চিন্তাভাবনা রাখছি যে, যদি প্রয়োজন পড়ে সমুদ্রপথে আমরা মেরসিনে নিয়ে যাব, তুরস্কে। সেখান থেকে হয়ত বিমানের চার্টার্ড ফ্লাইটে বা অন্য কোনো রেগুলার ফ্লাইটে নিয়ে আসব। সেটা অনেক ব্যয়বহুল। তবুও আমরা মানুষের জীবনের প্রশ্নে সেই ব্যবস্থা রাখছি।
২০২৩ সালে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে আসছিল হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে লেবাননে আক্রমণের গতি বাড়িয়েছে ইসরায়েল।
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে স্থল আক্রমণ শুরু করার দুই সপ্তাহ পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এলাকা খালি করার নির্দেশে লেবাননের ১২ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে।
যুদ্ধাবস্থার মধ্যে দেশে ফিরে আসার জন্য আকুতি জানিয়ে আসছেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই। এ বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের পর যারা ফিরতে ইচ্ছুক, তাদের নিবন্ধন করতে বলা হয়।
সেই নিবন্ধনে ১ হাজার ৮০০ জনের তালিকা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। নিয়মিত-অনিয়মিত সবার ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া চলার কথাও বলেছেন তিনি।
লেবাননে অবস্থান করা বাংলাদেশির সংখ্যা লাখখানেক হলেও আর্থিক পরিস্থিতির কারণে অনেকে দেশে আসতে চান বলেও জানান তৌহিদ হোসেন।
অনেকের দেশে ফিরতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিপুল অর্থ খরচ করে গেছেন, কিছু টাকা খরচ হওয়ার কথা নয়, তবুও তাদের পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। এখনি ফিরে এসে কী করবেন দেশে, এজন্য অনেক আসতে চান না। বিপদ জেনেও, বা অসুবিধা আছে জেনেও তারা থেকে যেতে চান।
আবার কেউ কেউ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকাতে কাজ করেন, যেখানে যুদ্ধ বা বোমাবাজি হয় না। তো, তারাও সেখান থেকে আসতে চান না। তারা সেখানে উপার্জন করে সংসারের খরচ চালাতে চান।
অনিয়মিতদের ক্লিয়ারেন্স পেতে জটিলতা তৈরি হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “অনিয়মিত যারা হয়ে গেছে, তাদের জন্য সমস্যাটা একটু বেশি। কারণ, ওখান থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। ক্লিয়ারেন্স নেওয়ার জন্য জরিমানা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
সেই জরিমানা মাফ করার ব্যবস্থাটা আমরা করছি। কারণ, এই পরিমাণটা বেশ। আবার তাদের হাতে টাকা-পয়সা নেই। আমরা সরকার থেকে দিচ্ছি, এজন্য আমরা অনুমোদনও নিয়েছি।
উপদেষ্টা বলেন, আনডকুমেন্টেডদের যে ক্লিয়ারেন্স দরকার, সেটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা আইওএমের সহায়তা চেয়েছি। যারা ডকুমেন্টেড আছেন, তাদেরও যেসব প্রক্রিয়া মানা লাগে, সেটা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদেরকে ক্লিয়ার করে নিয়ে আসার।