শনিবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শ্রীমঙ্গলে অনলাইন জুয়ার হোতা সাগর বৈদ্য রাতারাতি কোটিপতি

আব্দুর রকিব সোহেল, শ্রীমঙ্গল: কয়েক বছর আগে সেলুনে কাজ করতেন সাগর বৈদ্য। এখন কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। গড়ে তুলেছেন সমিতি। সবকিছুর পেছনে লুকিয়ে আছে সাগরের অনলাইন জুয়ার নেটওয়ার্ক। অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে এখন বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন তিনি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন, তবুও থেমে থাকেনি তার জুয়ার প্ল্যাটফর্ম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দুই বছর আগে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরের হবিগঞ্জ রোডের জেন্টস পার্লারে কাজ করতেন সাগর বৈদ্য। সেখান থেকেই শুরু করেন অনলাইনে জুয়া খেলা। কয়েকদিন যেতে না যেতেই তার জীবনের চাকা ঘুরে যায়। হয়ে ওঠেন কোটিপতি। কয়েক বছরের মধ্যে সাগরের ব্যবসাও বাড়তে থাকে।

শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজারের ফার্ম ফ্রেশ মিট জোন নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। সাঘরদিঘি রোডে সুমনা পোল্টি হাউজ নামে আরেকটি খাদ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠানের মালিকও তিনি। সবই হয়েছে রাতারাতি। এ ছাড়া তিনি গড়ে তুলেছেন আশার আলো শ্রমজীবী সমবায় সমিতি নামে একটি সমিতি। যার মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন দাদন ব্যবসার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এসব কিছুর পেছনে মূল হলো সাগরের অনলাইন জুয়ার নেটওয়ার্ক। অনলাইনে জুয়া খেলে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল জুয়া খেলার দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জানা যায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীমঙ্গলের এক ব্যবসায়ী বলেন, সাগর কাতার প্রবাসীদের নিয়েও জুয়ার প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ করেন। কয়েক বছর আগে সে ছিল সেলুনের দোকানদার। এখন বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। শ্রীমঙ্গলের শতাধিক অনলাইন স্কেমার ও জুয়াড়িকে সাগর জুয়া খেলা শেখাতে ও ডলার দিতে সহায়তা করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রায় শতাধিক কিশোর ও তরুণ নিষিদ্ধ অনলাইন স্ক্যামিংয়ে জড়িত। সাইবার অপরাধের মাধ্যমে ডলার কামানোর মোহে পড়েছেন গৃহবধূ ও স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীরাও। এ পরিসর দিনদিন বাড়ছে। প্রশাসন যত বেশি তৎপরতা চালাচ্ছেন, তার চেয়েও বেশি সংঘবদ্ধভাবে অপরাধে জাড়াচ্ছেন অপরাধীরা। স্ক্যামিং এক অনলাইন কেন্দ্রিক প্রতারণার ফাঁদ। স্ক্যামাররা অনলাইনে যৌন-সংক্রান্ত ফাঁদ পেতে দেশি-বিদেশি ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সম্পত্তি কেনা-বেচার মধ্যস্থতাও করেন তারা। দ্রুত ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতায় এ অন্ধকার গলিতে কোনো কিছু না ভেবেই পা বাড়াচ্ছেন উঠতি বয়সীরা।

মো. লকন নামের অনলাইন স্ক্যামার বলেন, ওয়ানএক্সব্যাট, মিলব্যাটসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে গেম খেলে ও বাজি ধরে এসব জায়গা থেকে ডলার আসে। আবার অভিজ্ঞ স্ক্যামাররা গ্রাহকদের সঙ্গে চ্যাট করেন। তারা ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহের পর বিশেষ কায়দায় অর্থ হাতিয়ে নেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাগর বৈদ্য গণমাধ্যমকে বলেন, আমি কীভাবে কী করেছি, আপনাকে জানাবো কেন? অনলাইনে কী করি না করি আপনার জানার কিছু নেই। এসব জেনে আপনার কী দরকার?

বেশ কিছু অনলাইন এবং প্রিন্ট সংস্করণে এই বিষয়ে গত জানুয়ারি মাসে নিউজ হলেও আজ অবধি তিনি এই অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম চালাচ্ছেন এবং ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে এসেও এই নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে দেখা যায়নি বলে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ‘করলা ভাজি’ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী।

এই বিষয়ে সেসময়ে শ্রীমঙ্গলের দায়িত্বে থাকা শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেছিলেন, অনলাইনে জুয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। কেউ এ ধরণের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *