বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ট্রাম্পের প্রশাসনে কারা কারা স্থান পেলেন

যায়যায়কাল ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জেতার পর ইতিমধ্যে পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে প্রশাসন সাজাতে শুরু করেছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন এ রিপাবলিকান নেতা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রথম মেয়াদের মতো এবারও একান্ত অনুগতদের দিয়েই প্রশাসন সাজাচ্ছেন তিনি।

ট্রাম্প এখন পর্যন্ত যাদের বাছাই বা মনোনীত করেছেন, তাদের মধ্যে যেমন আছেন তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী, তেমন আছেন বিভিন্ন খাতের নামকরা ব্যক্তি। আছেন তুলনামূলক স্বল্প পরিচিত ব্যক্তিও। কর্মকর্তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে অবশ্য তাদের পদে থাকা নিশ্চিত করতে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সম্ভাব্য জটিল অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ কারা স্থান পেলেন, দেখে নেওয়া যাক একনজরে:

আর এফ কে জুনিয়র: রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র (৭০) পেয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন তিনি।

খ্যাতিমান এ মার্কিন রাজনীতিককে নিয়ে রয়েছে বিতর্কও। করোনাভাইরাসের টিকার বিরোধিতা করে এ নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বও প্রচার করেছেন আর এফ কে জুনিয়র। তিনি অপ্রমাণিত এ ধারণা ছড়িয়েছেন যে শৈশবে টিকা প্রতিবন্ধিত্ব ডেকে আনতে পারে। করোনার টিকাকে প্রাণঘাতী বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ইলন মাস্ক: নতুন ‘সরকারি দক্ষতা’ বিষয়ক বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইলন মাস্ককে। তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ও ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের একজন। টেসলা ও এক্সের স্বত্বাধিকারী মাস্কের সঙ্গে কাজ করবেন ট্রাম্পের আরেক ধনাঢ্য সহযোগী বিবেক রামাস্বামী।

মাস্ক বলেছেন, তার লক্ষ্য ফেডারেল সরকারের ৭ ট্রিলিয়ন (৭ লাখ কোটি) ডলারের বাজেট থেকে ২ ট্রিলিয়ন (২ লাখ কোটি) ডলারের ব্যয় হ্রাস করবেন। তবে তা কীভাবে সম্ভব, সেটি ব্যাখ্যা করেননি তিনি।

মার্কো রুবিও: মার্কো রুবিও ট্রাম্প প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার লড়াই জোরালো হওয়ার মধ্যে শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে ফ্লোরিডার এ সিনেটরকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প।

কিউবান অভিবাসী বাবা–মায়ের সন্তান রুবিও ইসরায়েলের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘদিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত।

পিট হেগসেথ: পিট হেগসেথ পেয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের উপস্থাপক ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ডের সাবেক এ সদস্য বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেবেন।

ট্রাম্পের প্রিয় সংবাদ নেটওয়ার্ক ফক্স নিউজে ২০১৪ সালে যোগ দেন হেগসেথ। সপ্তাহান্তের একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে থাকেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের প্রায় ২ দশমিক ৯ মিলিয়ন কর্মীকে সামলাতে হবে তাঁকে।

মাইক ওয়ালৎস: ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয়েছেন মাইক ওয়ালৎস। কংগ্রেস সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক এ কর্মকর্তা ভবিষ্যতে হোয়াইট হাউসের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন।

ওয়ালৎস চীন ও রাশিয়াবিরোধী হলেও ইউক্রেনে মার্কিন সমর্থন কমিয়ে আনার পক্ষপাতি।

ডগ বারগাম: ডগ বারগাম (৬৮) হচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার বলেন, নর্থ ডাকোটার গভর্নর বারগামকে তিনি এ পদের দায়িত্ব দিচ্ছেন। সম্পদশালী বারগাম সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের একজন সাবেক নির্বাহী।

বারগাম নিজেকে একজন প্রথাগত ব্যবসায়িক মনমানসিকতার রক্ষণশীল ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে একসময় রিপাবলিকান পার্টি থেকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তিনি। পরে অবশ্য মনোনয়নের দৌড় থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন ও ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেন।

জন র‍্যাটক্লিফ: যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক পদে বসছেন জন র‍্যাটক্লিফ। ট্রাম্পের প্রথম দফার প্রেসিডেন্ট মেয়াদে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ছিলেন তিনি।

তুলসী গ্যাবার্ড: তুলসী গ্যাবার্ডকে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে বাছাই করেছেন ট্রাম্প। গ্যাবার্ড হাওয়াই থেকে নির্বাচিত সাবেক কংগ্রেস সদস্য। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে দ্বিতীয় মেয়াদে সমর্থন দিতে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ ত্যাগ করেছিলেন গ্যাবার্ড।

জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে গ্যাবার্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় রক্ষার কাজ করতে হবে।

ম্যাট গেৎস: ট্রাম্প প্রশাসনে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করবেন ম্যাট গেৎস। কট্টর এ রিপাবলিকান নেতার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আছে। নারী পাচারের অভিযোগে কয়েক বছর ধরে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলেছে। গেৎস অবশ্য নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়নি।

ক্রিস্টি নোয়েম: ট্রাম্পের প্রশাসনে ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পাচ্ছেন সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম।

নোয়েম ট্রাম্পের রানিং মেট (ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী) হতে পারেন বলে নির্বাচনের আগে আলোচনা ছিল। ২০২২ সালের নির্বাচনে বড় জয় নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে সাউথ ডাকোটার গভর্নর নির্বাচিত হন ক্রিস্টি। করোনা মহামারির সময় নিজের অঙ্গরাজ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার বিরোধিতা করে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনায় আসেন।

নতুন দায়িত্বে নোয়েম ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসননীতি কার্যকর করা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসী বিতাড়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

গত এপ্রিলে প্রকাশিত স্মৃতিচারণামূলক এক বইয়ে ক্রিস্টি লেখেন, নিজের বাড়িতে ‘অবাধ্য’ একটি কুকুরকে গুলি করেন তিনি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।

টম হোম্যান: যুক্তরাষ্ট্রের প্রবীণ অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোম্যান। জানুয়ারিতে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলে তাঁর প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে হোম্যান দেশটির সীমান্ত দেখভাল করবেন। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত রোববার ঘোষণা দেন, হোম্যান হবেন তাঁর দ্বিতীয় দফার প্রশাসনের ‘সীমান্ত জার’।

এলিস স্টেফানিক: এলিস স্টেফানিক ২০১৪ সালে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর কোনো নারী এত কম বয়সে আইনসভার সদস্য হননি। ডোনাল্ড ট্রাম্প স্টেফানিককে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। স্টেফানিক নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য এবং ট্রাম্প ও ইসরায়েলের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত।

মাইক হাকাবি: ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব পেয়েছেন মাইক হাকাবি। তাকে নিয়ে ট্রাম্পের করা একটি মন্তব্য হলো, ‘আরকানসাসের সাবেক এই গভর্নর একজন খ্রিষ্টান যাজক থেকে রাজনীতিবিদ হয়েছেন। তিনি ইসরায়েল ও ইসরায়েলের জনগণকে ভালোবাসেন। একইভাবে ইসরায়েলের জনগণও তাঁকে ভালোবাসেন।

অন্যান্য: ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও রয়েছেন সাবেক কংগ্রেস সদস্য লি জেলডিন (পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা), ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার শিবিরের ব্যবস্থাপক সুসি ওয়াইলস (হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ), জর্জিয়ার সাবেক কংগ্রেস সদস্য ও ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ডগ কলিন্স (ভেটেরানস অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি)।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ