রবিবার, ২৮শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১২ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

, এর সর্বশেষ সংবাদ

ভারত–পাকিস্তানের ৯ বন্দীর মরদেহ হিমঘরে

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: ভারত ও পাকিস্তানের ৯ বন্দীর মরদেহ দেশের তিনটি হাসপাতালের হিমঘরে ছয় মাস থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে পড়ে আছে।

বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের নাগরিকদের মরদেহগুলো বুঝে নিচ্ছে না বলে জানিয়েছে কারা অধিদপ্তর। দিনের পর দিন মরদেহগুলো হিমঘরে সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ যাচ্ছে।

কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, ‘এসব মরদেহ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বারবার দেশ দুটির হাইকমিশনে চিঠি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত মরদেহ নেয়নি। মরদেহ সংরক্ষণে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।’

কারা অধিদপ্তর জানায়, নয়জনের মধ্যে আটজন ভারতীয়, একজন পাকিস্তানি। তাদের মধ্যে ছয়জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে আছে। দুজনের মরদেহ আছে শরীয়তপুরের সদর হাসপাতালের হিমঘরে। আর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে আছে অপর মরদেহটি।

কারা অধিদপ্তর ও হাসপাতাল সূত্রের তথ্যমতে, পাকিস্তানের নাগরিক মোহাম্মদ আলী ২০২১ সালের ১৮ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হেফাজতে ছিলেন। তার বাবার নাম সালামত। বাড়ি পাকিস্তানের করাচি। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছিল।

ভারতের নাগরিক ইমতাজ ওরফে ইনতাজের (৪৭) বাড়ি দেশটির উত্তর প্রদেশে। তার বাবার নাম ফারুক আলী। নীলফামারী জেলায় তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। নীলফামারী জেলা কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হেফাজতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২১ সালের ১৪ জুলাই তিনি মারা যান।

তারেক বাইনের বাড়ি ভারতের বিহারে। বাবার নাম মরন বাইন। ২০২১ সালের ৮ জুলাই শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের হেফাজতে স্থানীয় একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি মারা যান। পরে তার মরদেহ গোপালগঞ্জ থেকে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হিমঘরে রাখা হয়।

ভারতের নাগরিক খোকন দাসের বাড়ি দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। বাবার নাম অচিন দাস। ২০২২ সালের ৩ মার্চ খোকনের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। তিনি শরীয়তপুর জেলা কারাগার ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

অশোক কুমারের বাড়ি ভারতের দিল্লি। তার বাবার নাম মহেষ আগরওয়াল। অশোক নেত্রকোনা জেলা কারাগারে ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ভারতের নাগরিক কুনালিকার বাড়ি দেশটির ঝাড়খন্ড রাজ্যে। বাবার নাম শাম্মাদি। ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। কুনালিকা লালমনিরহাট জেলা কারাগারে ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। এই কারাগারের হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

উল্লিখিত ছয়জনেরই মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে আছে।

সতেন্দ্র কুমারের বাড়ি ভারতের দিল্লি। বাবার নাম চন্দ্র পাল। অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় মামলা হয়েছিল। তিনি শরীয়তপুর জেলা কারাগারে ছিলেন। অসুস্থ হলে তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি তিনি মারা যান। তার মরদেহ হাসপাতালটির হিমঘরে আছে।

একই দেশের নাগরিক বাবুল সিং। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় মামলা হয়েছিল। তিনি শরীয়তপুর জেলা কারাগারে ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মারা যান।

সুরাজ সিংহের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বাবার নাম সুদ্ধ সিং। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের মহেশপুর থানায় মামলা হয়েছিল। সর্বশেষ তিনি খুলনা জেলা কারাগারে ছিলেন। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৪ সালের ৭ জুলাই মারা যান।

কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল-ফরহাদ বলেন, এই ৯ বিদেশি বার্ধক্যের কারণসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

কারা সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা দেশের ৬৮টি কারাগারে ৪৬৭ জন বিদেশি বন্দী আছেন। কোনো বিদেশি বন্দী মারা গেলে তার লাশ হস্তান্তরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের হাইকমিশন বা দূতাবাসকে চিঠি দেওয়া হয়। নাম–পরিচয়-ঠিকানা যাচাই করে হাইকমিশন বা দূতাবাস পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু ২০২১ সালের ১৮ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত সময়ে মারা যাওয়া আট ভারতীয় ও এক পাকিস্তানি বন্দীর মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়টি ঝুলে আছে। এসব মরদেহ নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বারবার দেশ দুটির হাইকমিশনে চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া মিলছে না।

কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, বিধি অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে লাশ কোনো দেশ বুঝে না নিলে তা আঞ্জুমান মুফিদুলের মাধ্যমে দাফন বা সৎকার করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনায় তারা লাশগুলো এখনো হিমঘরে সংরক্ষণ করছেন। তবে দেশ দুটি মহদেহগুলো গ্রহণ না করলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম বা অন্য কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে দাফন-কাফন বা সৎকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ