বুধবার, ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বুড়িচংয়ে ৪ বছরের শিশুকে পুকুরে ফেলে দিলেন শিক্ষক

কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বালু নিয়ে খেলা করায় এক শিক্ষক চার বছর বয়সী শিশুকে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শুক্রবার বুড়িচং থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন শিশুটির মা।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে বুড়িচং সদর ইউনিয়নের বুড়িচং পূর্ব পাড়া এলাকার মঞ্জুর আলী সরদার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। মিফতাহুল মাওয়া নামের ওই শিশু বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এরই মধ্যে ওই ঘটনার ৪ মিনিট ১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে শাহজাহানকে শিশুটির মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখা যায়। এ সময় তিনি পুকুরে ফেলার কথা স্বীকার করেন।

মিফতাহুল মাওয়া ওই এলাকার সৌদিপ্রবাসী নজির আহমেদের মেয়ে। অভিযুক্ত মো. শাহজাহান একই এলাকার বাসিন্দা। তিনি বুড়িচং সদরের ফজলুর রহমান মেমোরিয়্যাল কলেজ অব টেকনোলজির শিক্ষক।

বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল হক শুক্রবার রাতে বলেন, মেয়েকে পানিতে ফেলে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শিশুটির মা সামছুন নাহার তানিয়া বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার আসামি শাহজাহানকে ধরতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তবে ঘটনার পর ভিডিও ভাইরাল এবং থানায় মামলা হওয়ার পর তিনি এলাকা থেকে পলাতক রয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে ধরার চেষ্টা চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মিফতাহুল মাওয়া ও তার বড় বোন গালিবা সুলতানার (১০) সঙ্গে খেলতে বের হয়। একপর্যায়ে সড়কের পাশে রাখা প্রতিবেশী শাহজাহানের বালুতে হাত দিয়ে খেলা করছিল মাওয়া। এটি দেখে শাহজাহান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে চার বছরের শিশুকে তুলে পাশের একটি পরিত্যক্ত পুকুরের নোংরা পানিতে ফেলে দেন। বড় বোন গালিবা সুলতানা এ সময় শাহজাহানের পা ধরে ক্ষমা চাইলেও তিনি শিশুটিকে না তুলে বাসায় চলে যান। পরে গালিবার চিৎকারে শিশু মাওয়াকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন এক পথচারী নারী। তিনি দ্রুত শিশুটিকে নোংরা পানি থেকে উদ্ধার করেন। পরে পরিবারের লোকজন শিশুটিকে দ্রুত বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে ধারণা করা ৪ মিনিট ১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, শাহজাহানের উদ্দেশে শিশুটির মা সামছুন নাহার বলছিলেন, ‘আপনার মধ্যে কি মনুষ্যত্ব নেই? আপনি আমার বাচ্চাকে পানিতে ফেলে দিলেন! আপনি একজন সামাজিক মানুষ হয়ে এমন কাজ কীভাবে করতে পারলেন? একটু বালু ফেলে দিয়েছে বলে আপনি এভাবে আমার বাচ্চাকে পানিতে ফেলে দেবেন? আপনি কি যুক্তিসংগত কাজ করলেন এটা? আমার বাচ্চাকে ফেলে দেওয়ার পর না উঠিয়ে উল্টো বলছেন বাচ্চাটা মরে যাক। আপনার বালুর মূল্য আছে, আমার বাচ্চার মূল্য নাই?’

প্রতি উত্তরে ভিডিওতে শাহজাহানকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমার বাচ্চা নাকি কার বাচ্চা, এটা আমি দেখব না। আমার কাছে বালুর মূল্য বেশি। আজ ২০ দিন ধরে সবাইকে বলতেছিলাম, কেউ আমার কথা শোনেনি। তোমার বাচ্চা এখানে এসে বালু ধরেছিল কেন? তোমার বাচ্চা আমার এখানে আসবে কেন?’ এরপর বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন দুজন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সামছুন নাহার বলেন, ‘শাহজাহান নামের ওই শিক্ষকের বয়স ৫০ বছর আর আমার মেয়েটার বয়স ৪ বছর। তিনি কীভাবে এই কাজ করতে পারলেন। আমার মেয়েটা মরতে মরতে বেঁচে গেছে। এখনো তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। শাহজাহান শিক্ষক নামের কলঙ্ক। ঘটনার পরও তার কোনো অনুশোচনা নেই। তার কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে সামান্য বালুর মূল্য বেশি।’

তিনি এ ঘটনায় শাহজাহানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত শাহজাহানের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ