
রাজশাহী ব্যুরো: ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে এই স্তম্ভ নির্মিত হয়, যা বর্তমানে ‘শহীদ মিনার’ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক কারণেই সময়ের সাথে ভাষা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে রয়েছে শহীদ মিনার। এর পাশাপাশি সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনারের ব্যাপক প্রবণতা রয়েছে৷
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়নের ও রাজশাহী মহানগরীর বেলপুকুর থানাধীন (আরএমপি) চকধাদাশ গ্রামে চকধাদাশ উচ্চ বিদ্যালয় নামে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৩ সালে এসএসসি পরিক্ষার্থীরা শহীদদের স্মরণে রাখার জন্য তৈরী করে শহীদ মিনার। কিন্তু সেই শহীদ মিনারে ২১ শে ফ্রেব্রুয়ারি সকালে গিয়ে দেখা যায় ছাগল বাধা। নেই ফুলের ছিটেফোঁটাও।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন ছাত্রসমাজ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের রাজশাহী জেলা শাখার যুগ্মআহ্বায়ক মোখলেসুর রহমান বিজয় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কথা বলবো। সেই সাথে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলবো। আমরা ঘটনার বিষয়টির তদন্ত করে সত্য হলে অবশ্যই ঘটনার বিষয়ে কর্মসূচি দেব৷
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মুনতাসির রহমান আলামিন বলেন, ‘আমরা সকালে স্কুলে গেছিলাম। আলোচনা সভা, দোয়া করেছি। তবে ফুল দেইনি। ছাত্রছাত্রীদের ডাকলেও আসে না তাই আমরা আলোচনা সভা করেছি।’
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আকরাম আলী বলেন, ‘আমরা সকালে স্কুলে গেছিলাম। রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেছি, আলোচনা সভা করেছি।’ ছাগল বাঁধার বিষয়ে জানতে তাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চলে আসার পর রমজান এমন করেছে। প্রায়দিন এই কাজ করে, কেন করে বুঝি না।’ রমজানকে অনেক বার নিষেধ করেছি। অপরিষ্কারের কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘এবার কত মাজার ভেঙে দেয়া হলো। কত কি করছে। শহীদ মিনারের প্রতি বর্তমান সরকারের তেমন ইয়া নাই (গুরুত্ব নাই)।’
শহীদ মিনার প্রতিদিন ঝাড়ু দেয়া হয় স্কুল ঝাড়ু দেয়ার কারণে। শ্রদ্ধা নিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বৈরি আবহাওয়া, মোন ভালো নেই এলাকার মানুষও ফুল দেই না, তাই ফুল দেয়া হয়নি। প্রতিবার দেয় এবার দেইনি। খোঁজ নেন কয়টা স্কুলে ফুল দিছে? কোনো স্কুলে ফুল দেইনি। তবে শহীদ মিনারটিতে বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরতে হবে নাহলে শহীদ মিনারের মর্যাদা ঠিক থাকবে না।’
অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ব্রাইট লাইফ ভলান্টিয়ার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘দিনটি আমাদের গৌরবের। যেখানে মাতৃভাষা দিবস বিশ্বজুড়ে পালন হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে কেউ অবহেলা বা অবজ্ঞা করলে তা হবে দুঃখজনক। ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক পি. কে বলেন, ‘গ্রামের স্কুলগুলোতে যারা শিক্ষকতা করেন তাদের অনেক প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়ে। গ্রামের মানুষরা শিক্ষকদের কথার গুরুত্ব দিতে চান না। কেউ ধান, ভুট্টা শুকাতে দেই, কেউ গরু বাঁধে, কেউ ছাগল বাঁধে। শহীদ মিনার হলো আমাদের সম্মানের শ্রদ্ধার একটি প্রতীক। এই উপলব্ধি আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের লোকজনেরা এখনো বুঝে উঠেনি। সেটা আমাদের শিক্ষিত লোকদের ব্যর্থতা। আমরা তাদের শহীদ মিনারের মর্যাদা সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হয়নি৷ এটাই হচ্ছে অসচেতনতা এটিই হচ্ছে মূল কারণ।’
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক বলেন, ‘নির্বাহী অফিসার স্যার ছুটিতে আছেন। এটা তো ঠিক না। প্রতিটি দায়িত্বশীল নাগরিকেরই শ্রদ্ধা জানানো উচিত। ইউএনও স্যার আসলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন।