শনিবার, ১৪ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৮শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

লাকসামে বৃদ্ধকে হাত-পা বেধে নির্যাতন, ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন!

মো. জিল্লুর রহমান, লাকসাম (কুমিল্লা): লাকসামে বাবা’র সম্পত্তির সন্তানদের নামে লিখে না দেয়ায় বাবাকে হাত-পা বেঁধে গরম পানি মাথায় ঢেলে নির্যাতন চালায় সন্তানেরা। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় লাকসাম থানার ওসির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

বৃহস্পতিবার দুপুরে লাকসাম পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার ১মিনিট ৪৫সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক ফেসবুকে মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, গোপালপুর গ্রামের বাড়ির উঠানে বৃদ্ধ বাবার হাত পা বেধে টানাহেঁচড়া করছে ছেলে মেয়েরা। পিঠ ও ঘাড় ধরে একের পর এক ধাক্কা দিতেই থাকে তার সন্তানেরা। গায়ের গেঞ্জিটাও টানতে টানতে ছিঁড়ে ফেলেন তারা। এসময় বাবাকে টেনেহিঁচড়ে জবরদস্তি করে তাকে হাত পা বাঁধা হচ্ছে এরপর গরম পানি বাবার মুখে ঢালছেন তারই সন্তানেরা।

এসময় ওই বৃদ্ধ বাবা চিৎকার করে বলেন ‘ও আল্লাহ রে ‘ও আল্লাহ ‘ও মা গো মা ‘ ও ভাইরে ভাই, ও জসিমের মা’রে, ও জসিমের মা, আমারে বাঁচান, কে কোথায় আছেন- আমাকে বাঁচান আমাকে মাইরা ফেলছে তারা। ওই নির্যাতন দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে (জলিল) উদ্ধার করেন।

জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধের নাম আবদুল জলিল (৬০)। আর নির্যাতনকারীরা হচ্ছেন তার ছেলে নোমান (২০), রকি (১৬), মেয়ে নাজমিন (২৬), নুপুর (১৩) ও তার স্ত্রী রিনা আক্তার (৪৫)। তাদের বাড়ি লাকসাম পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুর গ্রামে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী বাবা আবদুল জল বাদী হয়ে সন্তান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ঘটনাস্থলে আসেন থানা পুলিশের সদস্যরা।

স্থানীয় লোকজন জানান, গোপালপুর গ্রামের মৃত হাজী ওয়ালীউল্লার ছেলে আবদুল জলিলের নামে বসতবাড়ি ও মাঠে ১’শ ২০ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। জলিলের স্ত্রীসহ তিন ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে শান্ত প্রবাসে থাকেন সে প্রবাস থেকে ওই সম্পত্তি তার নামে লিখে দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময় আবদুল জলিলকে হুমকি দেয়। এবং বাড়িতে থাকা জলিলের সন্তানেরাও তাকে মারধর করে এবং বাবাকে ভরণপোষণও দিচ্ছিলেন না। এ নিয়েই সন্তান ও স্ত্রীর সঙ্গে জলিলের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় অনেক বার সামজিক ভাবে শালিস দরবারও হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার আবদুল জলিল জানান, অনেক দিন ধরে আমার সন্তানেরা সম্পত্তির নেয়ার জন্য আমাকে বিভিন্ন সময়ে হুমকিদুমকি দেঋ। আমার স্ত্রী রিনা আক্তার এর প্রতিবাদও করেনা। আমাকে তারা ভরণপোষণও দেয়না। ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে ঝামেলা করে। ওই দিন আমার সন্তানেরা বাড়ির উঠানের মধ্যে আমার হাত-পা বেঁধে অনেক মেরেছে। হাত-পায়ে শরীরে এখনো দাগ আছে। তিনি বলেন- আরেক ছেলে খারাইয়া থাইক্কা কয়- হালারপো হালারে পিডা। আমার স্ত্রী এসময় বলে তার কাছে নগদ টাকা আছে, কোথায় রাখছে টাকাগুলো। টাকাগুলো লইয়া ল, তারে মাইরা তারে বাড়ি থেকে বের করার জন্য সন্তানের সঙ্গে সহযোগিতা করে আমার স্ত্রী রিনা আক্তার। নির্যাতনের সময় স্থানীয়রা এসে আমাকে উদ্ধার করে। এখন পযন্ত আমি বাড়িতে যাইনি সারারাত রাস্তায় ছিলাম।

এ ব্যাপারে লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানা বলেন, নির্যাতনের ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় নির্যাতিত আবদুল জলিল থানায় তার সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন, পুলিশ ঘটার স্থানে আছেন। তদন্তের মাধ্যমে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, এটি তাদের পারিবারিক বিষয়। মিমাংসা করে দিয়েছি।

প্রসঙ্গত, অজ্ঞত কারণে লাকসাম থানার ওসি অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব‍্যবস্থা নেননি। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ‍্যমে নেটিজেনদের মধ‍্যে ক্ষোভ দেখা গেছে

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ