
রাজশাহী ব্যুরো: ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের উপস্থিতিতে সংগঠনটির সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন রাজশাহীর ছাত্রলীগের এক নেতা। গত রোববার পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ছাত্রদলের নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিযোগও উঠেছে ওই নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
ছাত্রলীগের ওই নেতার নাম মো. শাহাদাত হোসেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছিলেন। ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাবির তৎকালীন সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু তাকে এ পদ দেন। হাসিনার পতনের পর ফয়সাল আহমেদ রুনু ভারতে পালাতে গিয়ে বিএসএফের হাতে গ্রেফতার হন।
জানা গেছে, রাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাতের বাসা রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালি নলখোলা এলাকায়। তার পিতার নাম শহিদুল ইসলাম। তিনি হরিয়ান ইউনিয়ন ছাত্রলীগেরও নেতা ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। রাবিতে ছাত্রলীগের কিবরিয়া-রুনুর কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর বাবু-গালিবেরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। এছাড়া পবার হরিয়ান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা জেবর আলীরও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। বর্তমানে তিনি রাবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল মিঠুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে কাজ করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় রাবির জিয়া হলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিলেন শাহাদাত হোসেন। ১৮ জুলাই রাবির মুজিব হল ঘেরাও করে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। সেখানে শাহাদাতেরও মোটরসাইকেল ছিল। এছাড়া তিনি বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে মামলা এবং হামলা করে হয়রানি করেছিলেন বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ছাত্রদলের সম্মেলন হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির। ওইদিন ভোটের মাধ্যমে রাকিবুল ইসলাম রাকিব সভাপতি এবং ইমরুল কায়েস কাব্য সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ৬ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাবি শাখা ছাত্রদল আহবায়ক সুলতান আহমেদ রাহি। এছাড়া তাতে নির্বাচন কমিশনার ছিলেনÑ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদল সভাপতি আল মামুন এবং রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল মিঠু। ওই সম্মেলনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেনকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায়।
এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক ও পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ছাত্রদলের সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুলতান আহমেদ রাহি বলেন, ‘মিঠুর ক্যাম্পাসের পরিচিত হিসেবে শাহাদাত তাকে ফোন দিয়েছিল দেখা করার জন্য। সেই সুবাদে সেখানে গিয়ে স্টেজে উঠে ছবি তুলেছে। আমি পরে জানতে চাইলে মিঠু বলেছে, শাহাদাত ছাত্রদলের পদে ছিল এবং মামলাও খেয়েছে।’ তবে এরপর শাহাদাত ছাত্রদলের কেউ না বলেও দাবি করেন রাহি। তিনি বলেন, ‘সে ক্যাম্পাসের পরিচিত হিসেবে আসে ছবি তোলার জন্য।’
রাবি ছাত্রদলের রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল মিঠু বলেন, সে আমার পূর্বপরিচিত বা তার সাথে আমার সখ্যতা আছে এরকম না। সে নিজেকে রাবির আমার ছোটভাই ও ছাত্রদল নেতা বলে পরিচয় দেয়। সে আমার কর্মী না, তার অতীত ব্যাকগ্রাউন্ড জানিনা। ওখানে গিয়ে হয়ত সুযোগ নিয়ে সে ছবি তুলেছে।’
এদিকে, নিজেকে ছাত্রদল নেতা দাবি করে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করেছেন শাহাদাত হোসেন। রাজশাহী নগরীর এক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে ২০১৩ আমার বিরুদ্ধে আরএমপির বোয়ালিয়া থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি কোচিং সেন্টার চালাতাম। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য ছাত্রলীগের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয়েছিল।
পাবনায় সম্মেলনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি পাবনা ঘুরতে গেছিলাম। গিয়ে দেখি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এসেছেন। সেজন্য তাকে দেখে আবেগে আমি ছবি তুলেছি। আমি ছাত্রলীগের কেউ না, আমি ছাত্রদলের পোস্টেড নেতা।
এ ব্যাপারে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযাগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভি করেননি। পরে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি তিনি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।